মো. মেহেদী হাসান >
মঠবাড়িয়া উপজেলার একমাত্র সার্বজনীন পাঠাগার “শেরে বাংলা সাধারণ পাঠাগার”। চন্দ্রদ্বীপের চির গৌরব এবং এদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সূর্য সন্তানের সম্মানার্থে তার নামানুসারে এই গ্রন্থচর্চা কেন্দ্রের নামকরণ করা হলেও এই পাঠাগারের বর্তমান অভ্যন্তরীন অবস্হা তা প্রকাশ করে না।
এখানে যথেষ্ট পরিমাণ আলো বাতাসের অভাব, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে নেই বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা,
বৃষ্টি হলে পরে দেয়াল এবং ছাদ থেকে পানি পড়ে কখনো কখনো বইগুলো ভিজে যায়। এছাড়া রাস্তার পাশে এর অবস্থান হওয়াতে যানবাহনের হর্ণ এবং আশেপাশে সাইকেলের গ্যারেজ গড়ে ওঠায় এর শব্দ নিবিড় পাঠে মনোযোগ দিতে ব্যাঘাত ঘটায়। প্রমথ চৌধুরীর মতে,
“একটি পাঠাগার হচ্ছে হাসপাতাল স্বরূপ – যেখানে মনের চিকিৎসা করা হয়।”
বর্ণিত অবস্থা যদি হয় আমাদের মনোচিকিৎসা কেন্দ্রের রূপ, তাহলে কিভাবে আমরা সুন্দর মননের মানুষ হয়ে উঠব, কিভাবে আমাদের মানবীয় বিকাশ সাধন হবে ; প্রশ্ন রইল ।
অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থা এবং আকাশ সংস্কৃতি থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের আধুনিক মনোচিকিৎসা কেন্দ্র তথা পাঠাগার অত্যন্ত জরুরী ।
আমাদের পাঠাগারে বর্তমান সময়ে অন্যতম একটি সঙ্কট হলো যথেষ্ট পরিমাণ পাঠযোগ্য বইয়ের সঙ্কট, এখানে যেসব বই আছে তা দীর্ঘ পুরোনো, অনেক খুঁজেও নতুন কোনো বইয়ের সন্ধান মিলবে না। আর যেসব বই সংগ্রহীত আছে তার কাগজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং যথাযোগ্য রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুলো বালি আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
জাতিগত ভাবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে লাখো মুক্তিযোদ্ধার এবং বীরাঙ্গনা নারীর প্রাণ ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা অর্জন করছি । তাদের আত্মাত্যাগ কখনোই আমরা ভুলতে পারব না।
শেরে বাংলা পাঠাগারে স্বাধীনতার বিজয়গাথা রচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের অভাব দেখে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে লেখক ও অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক শ্রদ্ধেয় নূর হোসাইন মোল্লা স্যার বলেন,
“দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রের সরকারি পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের স্বল্পতা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। ”
শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হৃদয় নড়ে উঠুক, একটি আধুনিক মানের পাঠাগার গড়ে উঠুক ।
উল্লিখিত সমস্যা সহ আরও অন্যান্য সমস্যার কারণে পাঠক/পাঠিকা শ্রেণির দ্যাখা মিলছে না । ফলশ্রুতিতে , আমাদের তরুণী তরুণীরা মাদক সহ অন্যান্য অসামাজিক অনাচার ও কুপ্রবৃত্তিতে লিপ্ত হচ্ছে , যা প্রতিদিনের সংবাদপত্রে দেখছি এবং দৈনন্দিন ব্যপার পরিমাণে এর কু-ফল ভোগ করছি।
তাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে মঠবাড়িয়ায় একটি আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পাঠাগারের ব্যবস্থা করে সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়ন করার অনুরোধ করছি ।
লেখক : মেহেদী হাসান, সাহিত্য সম্পাদক, আজকের মঠবাড়িয়া ও পাঠাগার আন্দোলনের কর্মী
মঠবাড়িয়া ,