মো. গোলাম মোস্তফা >
হ্যাঁ বই পড়ুন , বই আনন্দ দেয় । বই মনকে পুলকিত করে । বই মনের কথা বলে । বই নিঙ্গতা দূর করে ,বিষন্নতা তাড়ায় । মনকে তাজা করে, তেজোদীপ্ত করে মহা মূল্যবান বই । বই প্রেরণা যোগায়, বই মনকে সুরভিত করে । বই অন্ধকার দূর করে । বই আলো ছড়ায় । অজানাকে জানতে চান ? বই পড়ুন । জাতীর বীর পুরুষ, বীর রমণীদের কথা জানতে চান, জাতি সমাজ রাষ্ট্রের সেবা করতে চান ? বই পড়ুন । তুমি কি ছাত্র ? বই পড় । আপনি কি শিক্ষক ? বই পড়ুন । ভাল ছাত্র হতে চাও ? বই পড়, বই পড় এবং বই পড় । ভাল শিক্ষক হতে চান ? ডাক্তার হতে চান ? প্রকৌশলী ? আমলা ? শাসক ? কবি ? সাহিত্যিক ? ভাল সাংবাদিক ? বই পড়ুন । পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সমাজতত্তবীদ, চিকিৎসাবিদ, প্রকৌশলী, শিল্পী, চিন্তানায়ক, আবিস্কারক তাঁরা সবাই বই পড়েছেন । বই-ই তাঁদের বড় করেছে । যে বই পড়েনা সে বন্য । যে জাতি বই পড়ে না তারা অসভ্য ।
মহান কিতাব আল কোরআন এ প্রথম নাজিলকৃত আয়াত “ ইকরা বিসমি রাব বিকাল লাজি খালাক” “পড় তোমার প্রভুর নামে” । আল্লাহ্ তালা কোরআনে ৯২ যায়গায় জ্ঞান চর্চার তাগিদ দিয়েছেন ।
২০০০ সালের কথা বাংলাদেশ বিমানে কোথায় যাচ্ছিলাম তা মনে নেই। পাশের আসনে এক ইউরোপিয়ান ইংরেজ ২ সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন, এখন দেশে ফিরছেন । ৪-৫ ঘন্টার জার্নি, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার ১৫ দিনের অভিজ্ঞতার কথা আমাকে বলছিলেন । ১৬ বছর পরেও তাঁর সেই কথাগুলো মনে পড়ছে স্পষ্ট ।
উনি কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন “ইউ পিপল আর পোর, ইউ পিপল আর সিক অ্যান্ড ইউ পিপল আর ইলিটারেট” । অর্থাৎ কিনা “আমরা গরীব, অসুস্থ এবং আশিক্ষিত” । তাঁর কথায় তখন খুব রাগ করেছিলাম এবং বলেছিলাম “আই বিলিভ উই আর পোর বাট হাউ ইউ কাম টু নো দ্যাট উই আর সিক এন্ড ইলিটারেট”? উনি আমার রাগের কারনটি বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে বললেন ফ্রেইন্ড তুমি রি-এক্ট করছ কেন ? আমি তো তোমাকে বলিনি, তোমার দেশের লোকগুলো সম্পর্কে আমার ধারনাটা উপস্থাপন করলাম মাত্র, আমার ভুলও হতে পারে ! এটি আমার প্রথম বাংলাদেশ ভ্রমন, একদিনের জন্যও আমি শহরে থাকিনি । ১৫ দিনই আমি তোমাদের সুন্দর গ্রামগুলো ঘুরে বেড়িয়েছি । অনেক লোকের সাথে কথা হয়েছে । ভাষাগত সমস্যা থাকলেও বুঝতে আসুবিধা হয়নি মোটেই । সহজ সরল গ্রাম্য লোকগুলো খুব মিস্টি কিন্তু জ্বীর্ণ শীর্ণ লোকগুলো তিন বেলা খেয়েছে বলে মনে হয় নি । সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছে বলেও মনে হয়নি । আর লেখা পড়া ! সে কথা আর কি বলব । যেখানে গ্রামের মুদি দোকানে বিভিন্ন প্রকারের ঔষধ মেলে নির্দ্বিধায় অথচ সেখানে আমার দৃষ্টিতে পড়েনি একটি লাইব্রেরী বা পাঠাগার । এতে করেই আমি বুঝতে পারলাম তোমরা অসুস্থ এবং অশিক্ষিতও । আমি তাঁর বিচক্ষনতা বুঝতে পেরে মনে মনে লজ্জিত হয়েছিলাম ।
কথাটি কতটা সাংঘাতিক পাঠক মাত্রই উপলব্দি করতে পারছেন । আজ ১৬ বছর পরে ঐ ইউরপিয়ান ইংরেজ লোকটির কথা মনে পড়ল, জখন দেখলাম “মঠবাড়িয়া প্রতিদিনে” লেখক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের “শের-ই-বাংলা পাঠাগারটি হোক মঠবাড়িয়াবাসীর জ্ঞানকেন্দ্র” লেখাটি পড়ে আমিও মঠবাড়িয়ার পাঠাগার সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানতে পারলাম । ইতিমধ্যে “আজকের মঠবাড়িয়া” ও “দৈনিক কালের কন্ঠ” পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে উঠে এসেছে ফেইজ বুক ভিত্তিক একটি ছাত্র সংগঠন মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসারের নিকট মঠবাড়িয়া শেরে বাংলা পাঠাগারের পরিবেশ সুরাক্ষার দাবিতে “স্মারকলিপি” প্রদান করেছেন । অনুষ্ঠানের ছবিতে শিক্ষা অনুরাগী অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানাব নুর হোসাইন মোল্লা এবং মুক্তিযোদ্ধা জনাব মজিবুল হক খান মজনুকে উপস্থিত দেখতে পেলাম । পত্রিকা পড়ে আরও জানতে পারলাম শতাধিক তরুন শিক্ষার্থী তাঁদের সংগঠনের মাধ্যমে পাঠাগারটির সংস্কার ও পুরোপুরি চালু করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ । সত্যিই এটি একটি মহৎ কাজ । আশা করবো তরুণরাই একদিন এই সমাজের দায়িত্ত্বভার গ্রহণ করবে,আর তাই এখন থেকেই এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে । যদি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসেন তবে পাঠাগারটি সুন্দর ভাবে পরিচালিত হতে পারবে । এতে শিক্ষার্থী ও সমাজের সকল শ্রেণী পেশার লোকের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে । খেলাধুলার পাশা পাশি পাঠাগার ভিত্তিক পড়াশুনার প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ বাড়াতে পারলে ইভটিজিং, মাদক সেবন ও জঙ্গিবাদ থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা সহজ হবে । ১৯৮৪ সালে স্থাপিত পাঠাগারটি ৩২ বছরে পরিধি ও কলেবর বৃদ্ধি হবার কথা থাকলেও সেটি এখন বিলুপ্ত প্রায় । লোক মুখে জানতে পারলাম পাঠাগারের ভবনটি জরাজ্বীর্ণ অবস্থায় কোন রকমে টিকে আছে । এটির ব্যাপক সংস্কার দরকার । আসবাব পত্র দরকার, মোট কথা ৩২ বছরে যেহেতু কোন প্রকার সুদৃষ্টি পড়েনি তাই ব্যপক সংস্কার প্রয়োজন । সবচেয়ে বড় যে কাজটি করতে হবে তা হল একজন ভাল মানের লিব্রেরীয়ান নিয়োগ দেয়া । কাগজে কলমে থাকলেও পাঠাগারটির অবস্থান সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও সাধারন মানুষের মধ্যে ধারনা নেই বললেই চলে । পাঠাগারটি চালু করে এর ব্যপক প্রচার প্রচারনা হওয়া দরকার । পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং বইয়ের সমাহার ঘটিয়ে সমাজে একটি নতুন ধারার আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে । এতে করে শিক্ষার্থী ও সমাজের সকল শ্রেণি, পেশার লোকের মধ্যে পড়ার আগ্রহ ব্যাপক ভাবে বাড়বে, সমাজ ও জাতি উপকৃত হবে । সকল স্থরের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতি মঠবাড়িয়ার জনগনের পক্ষ থেকে আবেদন থাকবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছোট ছোট পাঠাগার গড়ে তোলা যায় কি-না, পাশা পাশি উনিয়ন ভিত্তিক পাঠাগারও করা যায় কি-না তাও ভেবে দেখা যেতে পারে ।
সর্বোপরি মঠবাড়িয়া শেরেবাংলা পাঠাগারটিকে একটি পূর্ণাঃঙ্গ পাঠাগার রূপে গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন তার সঠিক ব্যবস্থা গ্রহনসহ সকল শ্রেণি পেশার পাঠাগার প্রেমিক সেখানে গিয়ে পড়াশুনা করতে পারে সেদিকে নজর দান এবং পাঠাগারের যথাযথ সংরক্ষন ও রক্ষণাবেক্ষণের দিকে নজর দান ইত্যাদি বিষয়ে জোর দেবার আবেদন রাখছি । পরিশেষে বলতে চাই আমরা যদি পাঠাগার ভিত্তিক সমাজ গঠনে সচেস্ট হতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধর্ম ও নীতি শাস্ত্রে দীক্ষিত করতে পারি তবে সন্ত্রাস, ইভটিজিং, মাদক মুক্ত ও নিরাপদ সমাজ, রাস্ট্র তথা পৃথিবী অর্জন করা সম্ভব ।
লেখক > মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মাছরাঙা টেলিভশন ।