ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - হরিণপালা ইকো পার্কে ফুটেছে শুভ্র শোভন কাঁশ ফুল

হরিণপালা ইকো পার্কে ফুটেছে শুভ্র শোভন কাঁশ ফুল

দেবদাস মজুমদার >

ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী ও মঠবাড়িয়ার তুষখালী সীমান্তবর্তী খাল নেমেগেছে বলেশ্বর মোহনায়। বলেশ্বর নদের মোহনার তীরে ভাণ্ডারিয়া অংশে হরিণপালা গ্রামটি এখন আকর্ষণীয় এক পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে। বলেশ্বরের এ মোহনার চর জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে হরিণপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক। এখানে দর্শনার্থীরা ভির করছেন ।বলেশ্বর তীরে এ ইকোপার্ক ঘিরে এখানে বিনোদন আর ভ্রমন পিপাসু মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত।একদা নিভৃত হরিণপালা গ্রাম মানুষের সমাগমে মুখরিত। বিশাল বলেশ্বর নদের জলরাশী ছুঁয়ে থাকা মেঘদল। বিশুদ্ধ হাওয়া আর মন মাতানো ইকোপার্ক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতার আবহ এনে দিয়েছে।d-5

গত শুক্রবার তখন পড়ন্ত বিকেল। ইকোপার্কের গেট দিয়ে ঢুকতেই ডান দিকে খোলা সবুজ ঘাসের প্রান্তরে চোখ জুড়িয়ে গেল। আহা অপরূপ ! শরতকাল বুঝিবা এসেই গেল। দুরে প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ে ওঠা কাঁশবন জানিয়ে দিল আসন্ন শরতের আবহ । এখানে ফুটে গেছে শরত শোভন শুভ্র কাঁশ ফুল। বেপথু বাতাসে দুলছে শুভ্রতা…আর আকাশ জুড়ে ধবল মেঘেদল যেন মিলেমিশে একাকার। কি অপরূপ শোভা হরিণপালা ইকোপার্কের কাঁশ ফুলে। তাই কাঁশ বনে চোখ জুড়ায় এখানের ভ্রমন পিপাসুদের। মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুটেছে কাঁশ ফুল। তবে মানুষের যত্ন আত্তি না থাকলেও প্রাকৃতিকভাবেই ফুটে আছে শোভন কাঁশফুল। হরিণপালা পার্কে যারা আসেন তারা এখন কাশবনেে উচ্ছাসের ছবিগুলো তুলে নেন। d-1

চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাদা
একধারে কাঁশবন ফুলে ফুলে সাদা।d-2

আমাদের প্রাণ ও প্রকৃতির শোভন কাঁশ ফুল কাব্যে এভাবে স্থান পেয়েছে। কাঁশ ফুল শোভন শুভ্র ফুল। চোখে পড়লেই আমরা বুঝে নিতে পারি আবহমান বাংলায় এখন শরৎকাল। বিস্তীর্ণ নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর কাঁশ ফুলের সমারোহ শরৎ প্রকৃতির এক নান্দনিক রূপ। কাঁশ ফুল প্রাণবন্ত ঋতু শরৎকালীন ফুল। ধবল কাঁশফুল শোভন সুন্দর বলে সবুজ প্রাণ আর মেঘের আকাশ মিলে মূর্ত প্রকৃতি নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে। কাঁশ ফুল আবহমান বাংলার চিরায়ত শরতের সুনন্দ স্নিগ্ধ ফুল।

কাঁশ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। কাঁশ ফুল সাদা লোমের মত শুভ্রতা নিয়ে ফোটে। এর মঞ্জরি ১৫ থেকে ৩০ সেন্টি মিটার লম্বা হয়। গুচ্ছমূল জাতের কাঁশ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ । এর পাতা কিছুটা রুক্ষ্মতায় সরু সোজা রেখার মত। এর উচ্চতা তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত হয়।

কাঁশ নদী তীর, জলাভূমি আবার কখনও উচু পতিত জমিতে গোছায় গোছায় জন্মে। কাশ ফুল (kansh) এর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum আর উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এর গোত্র পরিচিতি Poaceae। এর ইংরেজি নাম Giant Reed ।d-4

কাঁশ ফুল কেবল প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না । কাঁশ ঘাস শুকিয়ে গ্রাম দেশে মাদুর, ঘরের বেড়া ও ঘরের চালার ছাউনি তৈরি হয়। এছাড়া কাঁশ বন থেকে পাওয়া খড় ও ঝাটি পান বরজের জন্য দরকারি। কাঁশ খড় দিয়ে পান বরজের ছাউনী দেওয়া হয়। এছাড়া পান লতাকে উপরে উঠতে শলার (কঞ্চি) সাথে বেঁধে রাখতে খুব দরকারি শুকনো কাঁশ খড়। কাঁশ খড় দিয়ে পান লতা মুড়িয়ে কঞ্চির সাথে বাঁধতে যেমন সহজ তেমনি কাশ সহজে নষ্ট হয়না। ফলে কাঁশবন যেমন শরৎকালে প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে তেমনি এ উদ্ভিদের একটি বাণিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। কাঁশ থেকে কাগজের ম- তৈরি হয়। এছাড়া কাঁশ খড় গরু মহিষেরও বিশেষ খাদ্য।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, কাঁশ বন উপকূলের নদ ও নদীর তীরে প্রকৃতিগতভাবে জন্মালেও দেশের কোথাও এর বাণিজ্যিক আবাদ রয়েছে। সাধারণত গজিয়ে ওঠা কাঁশ বনের আগাছা পরিষ্কার করে কিছুটা সার দিলে এর আবাদ সম্প্রসারণে অধিক সুবিধাা মেলে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে কাঁশ বন কেটে তা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।d-6

মঠবাড়িয়া সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী উদীয়মান কবি মেহেদী হাসান(সাদা কাক) বলেন, কাঁশ একটি দরকারি উদ্ভিদ। কাঁশবন চাষে খরচ অল্প। দেশের কিছু কিছু এলাকায় এর সুরক্ষা ও চাষ আছে। আমাদের উপকূলীয় নদী তীরবর্তী এলাকায় আগে অনেক কাঁশবন দেখা গেলেও এখন অনেকটাই কমে গেছে। হরিণপালা ইকো পার্কের উত্তর প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কাশবন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মেলে ধরেছে । অপরূপ শোভন এই কাশবনের পরিচর্যা প্রয়োজন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...