ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি

বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি

নূর হোসাইন মোল্লা >

(৪র্থ পর্ব )
জাসদের এ বালকোচিত কাজের জন্যে পুলিশ ও রক্ষী বাহিনী ধর-পাকড় শুরু করে। ১৭ মার্চ রাতে পুলিশ জাসদের সাপ্তাহিক পত্রিকা “গণকন্ঠ” এর অফিসে হামলা চালিয়ে পত্রিকার সম্পাদক আল-মাহামুদকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের লোকেরা জাসদের কেন্দ্রীয় অফিস ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেয়। জাসদের অধিকাংশ নেতা কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্যে আত্মগোপনে চলে যায় এবং প্রকাশ্য কাজকর্ম বাদ দিয়ে গোপনীয়ভাবে কাজ করতে বাধ্য হয়। জাসদ একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ১৭ মার্চের ঘটনার পর ধীরে ধীরে চরম পন্থার দিকে অগ্রসর হয়। ১৭ মার্চের পর জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে একটা প্রচার পত্র বের হয়। এর শিরোনাম ছিল গণ আন্দোলনকে কিভাবে বিপ্লবী আন্দোলনে উন্নীত করা হবে। প্রচার পত্রে বলা হয়, সময়ের দাবি হল, শ্রমিক, কৃষক ও তরুণদের মধ্য থেকে উঠে আসা পেশাদার বিপ্লবীদের নিয়ে এলাকা ভিত্তিক গেরিলা ইউনিট গড়ে তোলা। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রধান রণ কৌশল হবে শহর অঞ্চলে উপর্যুপরি গণ আন্দোলন এবং গ্রাম অঞ্চল থেকে অভিযানের সমন্বয়ে একটা বিপ্লবী অভ্যুত্থান সংঘটিত করা। আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে জাসদ এপ্রিল মাসে “সাম্যবাদ” নামে একটা তাত্ত্বিক পত্রিকা প্রকাশ করে। জুলাই মাসে জাসদ সশস্ত্র বিপ্লবী গণবাহিনী গঠন করে। এর নেপথ্যে ছিলেন লেঃ কর্ণেল আবু তাহের। তাঁর মতে জনগণের সঠিক কাজ হবে প্রতারণার দায়ে শেখ মুজিবকে উৎখাত করা। যে জনগন মুজিবকে নেতা বানিয়েছে তারাই একদিন স্বৈরাচারী মুজিবকে ধ্বংস করবে । জনগণ কাইকে ষড়ডন্ত্র করার অধিকার দেয়নি। গণবাহিনী সম্পর্কে বলা হয় বলা হয় যে, রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস হলো বন্দুকের নল, কিন্তু বন্দুক অবশ্যই থাকবে সর্বহারা শ্রেণীর রাজনৈতিক পার্টির নিয়ন্ত্রনে ও কর্তৃত্বে। রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রন নিশ্চিত করা এবং গণবাহিনীকে সাংগঠনিক রূপ দেয়ার জন্যে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান খানকে (বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী) গণবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। তাঁর পদবী হয় রাজনৈতিক কমিশার। সাংগঠনিক কাঠামো ছিল অনেকটা অধুনা লুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল ফৌজের মত। লেঃ কর্নেল আবু তাহেরকে গণ বাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার এবং জাতীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুকে (বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী) ডেপুটি কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। ঢাকা বিভাগে হাসানুল হক ইনু, চট্টগ্রাম বিভাগে কাজী আরেফ আহমেদ, রাজশাহী বিভাগে মনিরুল ইসলাম এবং খুলনা বিভাগে শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে রাজনৈতিক কমিশার নিয়োগ করা হয়। কামরুজ্জানাম টুকু এবং এ.বি.এম. শাহজাহান যথাক্রমে খুলনা ও রাজশাহি বিভাগের কমান্ডার নিযুক্ত হন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে কাউকে কমান্ডর মনোনীত করা হয়নি। আঞ্চলিক বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার জন্যে বিপ্লবী গণ বাহিনীর ১০ সদস্যের একটা কেন্দ্রিয় কমান্ড গঠন করা হয়, যার মধ্যে ছিলেন কাজী আরেফ আহমেদ, হাসানুল হক ইনু, মোঃ শাহজাহান খান, মনিরুল ইসলাম, লেঃ কর্ণেল আবু তাহের, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, কামরুজ্জামান টুকু ও এ.বি.এম. শাহজাহান। বিপ্লবী গণ বাহিনী গঠনের পর মেজর ডালিম এবং মেজর নূর চৈৗধুরি তাহেরের সাখে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। কারন, তাহের এবং তাদের চিন্তাধারা একই রকম ছিল। জাসদ এবং গণ বাহিনী সদস্যরা রক্ষী বাহিনীর টার্গেট হয়। গণ বাহিনী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হয়। ফলে রক্ষী বাহিনীর সাথে গণ বাহিনীর সংঘর্ষ ছিল নিয়মিত। জাসদের প্রতি রক্ষী বাহিনীর আচরণ ছিল নির্মম। উভয় বাহিনীর হাতে কত মানুষ খুন ও গুম হয়েছে তার হিসাব কখনো পাওয়া যাবে না। ৮ অক্টোবর জাসদ মস্কোপন্থি ন্যাপ ও কমিউনিষ্ট পার্টি ছাড়া সকল দলের সমন্বয়ে সর্ব দলীয় জাতীয় সরকার গঠনের আহবান জানায়। শাহজাহান সিরাজ ২ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, আগামী ৮ নভেম্বরের মধ্যে ঐক্যের কথা ঘোষণা করা হবে। যদি সকলে মতৈক্যে উপনীত হতে না পারেন তা’হলে জাসদ এককভাবে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তাঁর ভাষ্য মতে, যেহেতু জাসদ সংগ্রামে বিশ্বাস করে, তাই আমরা নির্বাচনের কথা বলছি না। জাতীয় সরকার গঠিত হলে নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। জাসদের কথিত মতে সর্ব দলীয় ঐক্যজোট গঠিত না হওয়ায় জাসদ ২৬ নভেম্বর হরতাল আহবান করে। হরতালের দিন ব্যাপক বোমাবাজি ও বহু লোক হতাহত হয়। কর্ণেল আবু তাহেরের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ঢাকা নগর গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। এদিকে পিকিং পন্থি দলগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ভারতের দালাল ও আওয়ামী লীগকে ভারতের পুতুল সরকার বলে প্রচার করতে থাকে। আব্দুল হকের নেতৃত্বধীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিষ্ট পার্টি এবং সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ফাঁড়ি , থানা, বাংক ও হাট বাজার লুট, পাটের গুদামে অগ্নি সংযোগ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। জাসদের অধিকাংশ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায় জাসদ এবং গণবাহিনী অর্থ কষ্টে পতিত হয়। সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্যে ১৯৭৪ সালের জুন মাসে মেহেরপুর ট্রেজারি আক্রমন করে ৭৩টি অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ করে।

জাসদের গণ বাহিনীর সাথে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টির যোগাযোগ ছিল। মেজর এম.এ. জলিলের সাথে সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারের যোগাযোগ হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়। মেজর জলিল পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছুটিতে বাড়ি আসেন। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। তাঁর সাথে যারা প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তাদের অনেকেই সর্বহারা পার্টির সাথে সম্পৃক্ত। মেজর জলিলের প্রতিরোধ এক পর্যায়ে ভেঙ্গে পড়লে তিনি তাঁর অস্ত্রের ভান্ডার সর্বহারা পার্টির সহযোদ্ধাদের কাছে রেখে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে ভারতে চলে যান। ওই সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সিরাজ সিকদার বেশ কিছুদিন প্রতিরোধ চালিয়ে যান। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমনের মুখে তারা বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পরে। ১৯৭২ সাল থেকে এ দলটি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে সহিংসতার আশ্রয় নেয়। তারা পুলিশ ফাঁড়ি, থানা ব্যাংক লুট, পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হত্যা করতে থাকে। সর্বহারা পার্টির লড়াই ছিল আওয়ামীলীগের শ্বেত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের প্রায় ৪ হাজার নেতা, উপনেতা ও কর্মী নিহত হয়। অপর দিকে রক্ষী বাহিনী ও পুলিশের হাতে নিহত হয় জাসদ ও সর্বহারা পার্টির হাজার হাজার কর্মী। দেশে রক্তপাত ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলছে। প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও দুরনীতির কারণে জনদুর্যোগের মাত্রাও দিন দিন বেড়েই চলছে। এরূপ পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু জাসদের তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খানকে ডেকে পাঠান। অনেক দিন পর গুরু-শিষ্যের সাক্ষাৎ হয়। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর সাথে সিরাজুল আলমের একটা বিশেষ সম্পর্ক ছিল, যা শেষ পর্যন্ত অটুট ছিল। ঢাকায় যে জায়গায় তিনি থাকতেন সেখানে আসা-যাওয়ার পথে জাসদের অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু তাঁর বাসায় কখন পুলিশ ও রক্ষী বাহিনী যায়নি। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল। বঙ্গবন্ধু সিরাজকে বলেন, আমি একটা জাতীয় দল গঠন করতে চাই। সিরাজ এতে সম্মত হননি। তিনি প্রস্তাব করেন একটা জাতীয় সরকার গঠনের, যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে। বঙ্গবন্ধু তার প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি বলেন তার মানে কোয়ালিশন সরকার? ১৯৫৬ সালের কোয়ালিশন সরকারের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। বঙ্গবন্ধু সিরাজকে বলেন, সবাইকে নিয়ে একটা দল করতে চাই। তুই জলিল ও রবকে আমার দলে দে।

সিরাজুল আলম খান প্রস্তাবটি নিয়ে দলের কয়েকজন নেতার সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেন। মেজর জলিল, আব্দুর রব, মির্জা সুলতান রাজা, বিধান চন্দ্র সেন, শাহজাহান খান, এম,এ আউয়াল ও মমতাজ বেগম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। সিরাজ আব্দুর রব এর কাছে মতামত চেয়ে একখানা চিরকুট পাঠান। আব্দুর রব সবার সাথে পরামর্শ করে সিরাজুল আলম খানকে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। সিরাজুল আলম আবার বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে সম্মতির কথা জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, তোরা তো ৭২ সালে এটাই চেয়েছিলি। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় যখন উপনীত হলেন তখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন শেখ ফজলুল হক মনি। পূর্ব থেকেই সিরাজের সাথে মনির সম্পর্ক ভালো ছিল না। বঙ্গবন্ধু আর সামনে অগ্রসর হননি। শেখ মনি কিছু কিছু কাজের জন্যে শুধু নিজেই বিতর্কিত হননি, এর দায় বঙ্গবন্ধুকে নিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাসদকে হাতে পেয়েও শেখ মণির জন্যে ধরে রাখতে পারে নি।

১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাস খেকে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলা গুলোতে গণবাহিনীর কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী তাদেরকে খুঁজতে থাকে। পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দিত । আর রক্ষীবাহিনীর হাতে ধরা পড়লে মৃত্যু । বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় রক্ষী বাহিনী ও গণ বাগহনীর মধ্রে প্রায়ই সংঘর্ষ হত। এতে উভয় পক্ষের লোকই হতাহত হত। আওয়ামীলগের স্খানীয় নেতৃত্ব চাইলে সংঘাত এড়ানো যেত। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পিছনে রক্ষী বাহিনী লেলিয়ে দিতেন।

১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার সামনে ঈদগাহে প্রায় ১০ হাজার লোক ঈদুল আযহার নামায আদায় করার জন্যে কাতারে দাড়িয়ে যান। সামনের কাতারে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কুমারখালী-খোকসা এলাকার সদস্য গোলাম কিবরিয়া। লুঙ্গি-শার্ট পরিহিত ৩/৪ জন যুবক এসে তাঁর বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। মানুষ যে যেদিকে পারে ছুটে পলায়। ঈদের নামায আর হয়নি। গোলাম কিবরিয়া বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে পুলিশ ও রক্ষী বাহিনী ১ হাজারের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করে।

এরুপ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মাদউল্লাহ ২৮ ডিসেম্বর দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। জরুরী অবস্থা ঘোষণার পটভুমিতে বলা হয়ঃ রাষ্ট্রবিরোধী মহলের তৎপরতার ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়া স্বরূপ দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটেছে এবং জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল শক্তি হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বহুসংখ্যক দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক নেতাকে গুপ্ত কায়দায় হত্যা করেছে। ৫ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রাষ্ট্র বিরোধী মহলের বর্বর হত্যাকান্ডের শিকারে পরিনত হয়েছেন। রাষ্ট্র বিরোধী মহল উপসনালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেনি এবং গত ২৫ ডিসেম্বর ২টি পৃথক পৃথক ঈদের জামাতে নামায আদায় করার সময়ে কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনৈক চেয়ারম্যানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ——— এরুপ পরিস্থিতে দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা ছাড়া সরকারের হাতে আর কোন বিকল্প নেই। সেনাবাহিনী দুর্ণীতিবাজ, চোরাকারবারী ও মজুদদারকে ধর-পাকড় করে। সেনা বাহিনীর অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্দ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সেনা বাহিনী প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। দেশকে আসন্ন বিপর্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে মস্কো পন্থী ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।

অতপর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী জাতীয় সংসদে সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনী পাশ হয়। বঙ্গবন্ধু সকল রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্তি ঘোষণা করে ৬ জুন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ (বাকশাল)এর গঠনতণ্ত্র,বিভিন্ন কমিটি ও সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। কার্য় নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫ জন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ১১৫জন। উভয় কমিটির চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবং সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী। বঙ্গবন্ধুর মদত, বাকশাল ছিল সাময়িক ব্যবস্থা । দেশের শৃংখলা ফিরে আসলে তিনি আবার গণতন্ত্রে ফিরে আসবেন। আওয়ামীলীগের পুরনো মিত্র মস্কো পন্থী ন্যাপের ৫জন ও কমিউনিস্ট পার্টির ১জন বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য রাখা হয়। জাতীয় সংসদের আওয়ামীলীগ দলীয় সদস্য জেনারেল (অবঃ) এম.এ.জি. ওসমানী ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং জাসদের মঈনুদ্দিন আহমেদ ও আবদুল্লাহ সরকার বাকশালে যোগদান না করায় তাঁদের সংসদ সদস্য পদ খারিজ হয়। শেষ পর্যন্ত এ বাকশালই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
বাকশাল গঠনের পর জাসদের প্রকাশ্য সাংবিধানিক রাজনীতির কোন সুযোগ না থাকায় সমাজতান্ত্রিক কৃষি বিপ্লবের কর্মসূচীর সমর্থনে গণবাহিনী নানান কর্মকান্ডে জড়িত হয়। গ্রাম অঞ্চলে শুরু হয় শ্রেণী সংগ্রাম। আওয়ামী লীগের ধনী কৃষকদের ওপর হামলা হতে থাকে। এসময়ে তারা পুলিশ ফাঁড়ি ও থানা আক্রমন করে অস্ত্র-শস্ত্র লুট করে। বাকশালের লোকেরা গ্রাম ছেড়ে শহরে আশ্রয় নেয়। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রংপুর, বগুড়া, পাবনা অঞ্চলে ও টাঙ্গাইলে গণবাহিনীর কার্যক্রম ছিল দৃশ্যমান। …..(চলমান)
লেখকঃ অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
মোবাঃ ০১৭৩০-৯৩৫৮৮৭

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...