ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - মোয়াজ্জেমের একুশ

মোয়াজ্জেমের একুশ

মনোতোষ হাওলাদার, বামনা(বরগুনা)
চল্লিশউর্ধ্বো মোয়াজ্জেম হোসেন পেশায় একজন নিরাপত্তা কর্মী। খাদ্য গুদামের নিরাপত্তার দ্বায়িত্ব তাঁর একার ওপর। জীবিকার তাগিদে এইচ এস সি পাশের পরে আর লেখা পড়ায় এগুতে পারেননি তিনি। প্রায় ১১ বছর ধরে নিয়োজিত রয়েছেন নিরাপত্তা কর্মীর চাকুরীতে। বর্তমানে তিনি চাকুরীর কারণে থাকেন বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী সরকারী খাদ্য গুদামে। তার আবাসস্থলের পাশেই কলাগাছিয়া জেলে পল্লী। এখানে যোগদানের পর থেকেই এই জেলে পল্লীর ছোট ছোট শিশুদের সাথে তাঁর গভীর সখ্যতা গড়ে উঠে। এই জেলে পল্লীর সকল শিশুরা তাকে মামা বলে ডাকে।
মোয়াজ্জেম হোসেন ২০১৭ সালে বামনা খাদ্য গুদামে যোগদানের পর থেকেই এই শিশুদের নিয়ে প্রতিবছর একুশ ফেব্রুয়ারী আসলে নির্মান করেণ বালুর শহীদ মিনার। সারারাত ধরে ওই জেলে শিশুদের নিয়ে খাদ্য গুদামের সামনে বিষখালী নদী তীরে বালু দিয়ে তৈরী করেন শহীদ মিনার। মোয়জ্জেমের সহায়তায় শিশুদের ছোট ছোট হাতে শহীদ বেদীটি পুর্নাঙ্গ রুপ পায়। এর পর হরেক রকমের ফুল দিয়ে ভরিয়ে তোলে শহীদ বেদীটি। বিভিন্ন প্রকার রঙ্গীন কাগজ কেটে বেদীর চার পাশ সজ্জিত করে মোয়াজ্জেমের ভাগ্নের দল। আশ পাশের বিভিন্ন গাছে বর্ণমালার অক্ষর হাওয়ায় দোলে।
সকালের প্রভাত ফেরি আর পুষ্পার্ঘ অর্পন শেষে মোয়াজ্জেম নিজের আর্থীক সহায়তায় দুপুরে তাদের নিজেদের তৈরী ওই শহীদ মিনারটির সামনেই চলে ভুরিভোজের আয়োজন। প্রায় দেড় শতাধীক শিশুদের দাওয়াত দিয়ে নিজে রান্না করে খিচুরী খাওয়ান মোয়াজ্জেম হোসেন। নিরাপত্তা কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন আসলে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।
মোয়াজ্জেমের এই একুশ উদ্যাপনে সংবাদ পেয়ে আজ বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারী) সকালে শিশুদের তৈরী বালুর শহীদ মিনার দেখতে ছুটে যান বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। কেউ কেউ মোয়াজ্জেমের এ উদ্যোগকে সংহতি জানিয়ে শিশুদের জন্য মিষ্টি, চকোলেটসহ বিভিন্ন খাদ্য নিয়ে যায়।
কলাগাছিয়া জেলে পল্লীর শিশু তাসলিমা আক্তার বলেন, মামায় প্রতিবছর আমাদের নিয়ে বালু দিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করেন। আমরা গভীর রাত পর্যন্ত এই শহীদ মিনার টি তৈরী করি। এর পর মামা আমাদের ভাষা আন্দোলনের গল্প বলেন।
বামনা খাদ্য গুদামের নিরাপত্তা কর্মী ও শিশুদের নিয়ে বালু শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোক্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি ছোট বেলায় বাবা-মায়ের মুখে ভাষা আন্দোলনের গল্প শুনেছি। এখানে যোগদানের পর দেখেছি এই জেলে পল্লীর শিশুরা লেখা পড়ায় অনগ্রসর। তাদের লেখা পড়ায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। শিশুদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদের বিদ্যালয়মুখী করার চেষ্টা করেছি। ওরা যাতে বাংলাদেশের মাতৃভাষা ও ভাষা শহীদের বিষয়ে কিছুটা ধারনা পায় এই উপলব্ধি থেকে আমি প্রতি বছর এই জেলে শিশুদের নিয়ে শহীদ মিনার তৈরী করি। ওদের সাথে ভাষা আন্দোলনের গল্প বলি।
সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী দেবদাস মজুমদার বলেন, দেশপ্রেম আর ভাষা প্রেম দেখতে প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি কখন মোয়াজ্জেম শহীদে মিনার তৈরী শুরু করেন। রাতে যেতে না পারলেও সকাল হলেই ছুটে যাই তাঁর বালুর শহীদ বেদী দেখতে, শিশুদের সাথে একটু সময় কাটাতে। মোয়াজ্জেম আসলে একটি ছোটখাটো বাতিঘর। আমি বিষ্মত আর নতজানু একজন স্ব-শিক্ষিত মোয়াজ্জেমের কাছে। মোয়াজ্জেম আসলে ভাঙ্গলে মাটির মতোন।

বামনা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সেট্রেক্টর মো. হাফিজুর রহমান তাঁর শিশু সন্তানকে নিয়ে মোয়াজ্জেমের বালুর শহীদ মিনার দেখতে গিয়ে বলেন, মোয়াজ্জেম একজন স্ব-শিক্ষিত দেশ প্রেমিক। দেশাত্ববোধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস শিশুদের মাঝে তুলে ধরে মোয়াজ্জেম সত্যিকারের দেশ প্রেমিকের ভুমিকা রাখছে।
বামনা উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মহিমা আক্তার বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর থেকে দেখে আসছি আমার নিরাপত্তা কর্মী মোয়াজ্জেম এই এলাকার জেলেদের শিশুদের নিয়ে প্রতিবছর শহীদ মিনার তৈরী করে। আমি ওর এই ভাষা শহীদের প্রতি ভালোবাসা দেখে মুগ্ধহয়ে যাই। প্রতিটি মানুষের মোয়াজ্জেমের মতোন দেশপ্রেম থাকা উচিৎ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...