ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - বিষখালীর জেলে শিশুদের অনন্য একুশ

বিষখালীর জেলে শিশুদের অনন্য একুশ

দেবদাস মজুমদার >>

রাতভর বালু দিয়ে ওরা শহীদ মিনার বানিয়েছে। রঙ্গীন কাগজ আর বাহারি ফুলে সাজিয়েছে শহীদ মিনার চত্বর। নদীতীরবর্তী বালুর প্রশস্ত মাঠে অর্ধশত জেলে পল্লির শিশুরা আজ বুধবার মহান একুশ পালন করে।

শহীদ মিনারের পাশে সাউন্ডবক্সে বাজে দেশাত্মবোধক গান আর অদূরে দুপুরে ভোজের জন্য ওরা রান্না করছে সবজি খিচুরি। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুরা জেলে পল্লির বাড়িতে গিয়ে একুশ পালনে বড়দের সহায়তা নেয়। এসব শিশু বালুর শহীদ মিনারটি ফুলে ফুলে ঢেকে দেয়।

বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী কলাগাছিয়া জেলে পল্লির অর্ধশত শিশু অন্যরকম চেতনায় মাতৃভাষা দিবস পালন করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বামনা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বিষখালী নদীর তীরে খাদ্য গুদামসংলগ্ন একটি বালুর মাঠে স্থানীয় কলাগাছিয়া গ্রামের জেলে পল্লির অর্ধশত শিশু মাতৃভাষা দিবস পালনে মহাব্যস্ত সময় পার করছে।

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. হোসেন (৮) জানায়, সহপাঠী তাসমীন, যুথী- এরা মিলে প্রথমে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পরে তাদের সঙ্গে আরো অনেক সহপাঠী ও ছোট-বড় ভাইয়েরা এই উদ্যোগে যোগ দেয়। মঙ্গলবার দিনভর তারা সবাই মিলে বালু দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে। পরে তারা জেলেপাড়ার বয়স্কদের কাছ থেকে একুশ পালনে সহায়তা নেয়।

স্থানীয় খাদ্যগুদামের দারোয়ান মো. মোশাররফ হোসেন জেলে শিশুদের একুশ পালনে সার্বিক সহায়তা করে। শিশুরা মাতৃভাষা দিবস পালন করবে একথা তাকে জানালে তিনি তাদের সকল প্রকার সহায়তা দেন। শিশুরা নিজেরাই বালু দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে বর্ণিল ফুল আর রঙ্গীন কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার চত্বর সুসজ্জিত করে। ওদের এমন উৎসাহ দেখে আজ দুপুরে ওদের জন্য খিচুরি ভোজের ব্যবস্থা করা হয়।

শিশুদের এমন অন্যরকম একুশ পালনের খবর শুনে কলাগাছিয়া গ্রামে ছুটে যান বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা, বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা, বামনা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান শিবলু জোমাদ্দারসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

জেলে পল্লির এই একুশ পালনের বিষয়ে কলাগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান শিবলী জানান, মাতৃভাষা দিবস পালনে শিশুদের এমন আয়োজন দেখে আনন্দ বোধ করেছি। আমাদের উচিৎ শিশুদের দেশাত্মবোধের চেতনায় পাশে শামিল হওয়া।

বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা বলেন, ‘শিশুদের মাঝে একুশের এমন চেতনা বিরাজ করলে নিশ্চয়ই তারা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠবে। জেলে পল্লির শিশুরা নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত। তবু ওরা একুশের চেতনায় শামিল হয়ে মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানিয়েছে। এমন আয়োজন আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।’

বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু মৃধা বলেন, ‘সকল শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত বাংলাদেশ। তাই শিশুদের দেশপ্রেমে উৎসাহ দিতে হবে। আমি খুব আনন্দিত হয়েছি নদীতীরের দরিদ্র শিশুদের একুশের চেতনা দেখে। নদীতীরে একটি শহীদ মিনার গড়ে তোলা যায় কিনা- তা ভেবে দেখা হবে।’

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...