ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - বহুরূপী প্রাণ

বহুরূপী প্রাণ

জহির রায়হান▶️
ভাবুন তো একবার আপনার চোখের সামনে টিকটিকির মত একটা প্রাণি পলকের মধ্যেই লাল থেকে নীল, নীল থেকে হলুদ, হলুদ থেকে ধূসর এমন ভাবে রং বদলাচ্ছে বারবার। অবাক লাগছে তাই না?? হ্যা। বাস্তবে এমন টা দেখা অসম্ভব কিছু না। ক্যামেলিওন বা বহুরূপী নামক প্রাণিটিই এই অদ্ভূত কাজ টি করে ।
টিকটিকিটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বের উষ্ণ বাসস্থান যেমন রেইন ফরেস্ট থেকে মরুভূমি, আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, ইউরোপ ,দক্ষিণ এশিয়া, হাওয়াই, ক্যালিফোর্নিয়া সর্বত্র। যাঁরা ইংরেজি ভালো জানেন, তারা নিশ্চয় জানেন যে, সুবিধাবাদী লোক বোঝাতে ইংরেজি তে Chameleon শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ক্যামেলিওন যেমন কেমোফ্লেজ এর আশ্রয় নিয়ে বারবার রং বদলায় সুবিধাবাদী মানুষ ও তেমনি। বারবার রং বদলায়। কর্ডাটা পর্বের রেপটিলিয়া/সরীসৃপ শ্রেণির এ প্রাণিগুলো লম্বায় ১৫ মিলিমিটার থেকে ৬৮.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। Brookesia micra (বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র সরীসৃপ) আকারে ক্ষুদ্র ও Furcifer oustaleti আকারে বৃহৎ ক্যামেলিওন বা বহুরূপী। প্রশ্ন হলো বর্ণ পরিবর্তন এরা কিভাবে করে থাকে?? আসলে এদের দেহের ত্বকের নিচে ক্রোমাটোফোর নামক পিগমেন্ট কোষ এই বর্ণ পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। পিংক, নীল, লাল,কমলা,সবুজ, কালো, বাদামী, হলুদ ও পার্পল এই কয়টি রং কখনো আলাদাভাবে কখনো আবার বিশেষ প্যাটার্ন এ এদের দেহ থেকে বিচ্ছুরিত হয়। বর্ন পরিবর্তনের মূল কারণ কেমোফ্লেজ হলেও আরো কিছু মজার দিক আছে। যখন এরা রেগে যায় বা কাউকে ভয় দেখায় তখন গাঢ় রং এ রঞ্জিত হয়, পুরুষ রা হালকা বহু রং এর প্যাটার্ণ এ দেহ সজ্জিত করে নারীদের কে সিডিউস করার জন্য,পটানোর জন্য বা আকৃষ্ট করার জন্য। কালো রং আলো শোষণ করে বাড়ায় এই নীতি এদের মাঝেও দেখা যায়। মরুবাসী কিছু কিছু ক্যামেলিওন বা বহুরূপী কালো রং এ রঞ্জিত হয় তাপ এর ভারসাম্য রক্ষার সুবিধার্থে। এদের চোখ ও এক বিচিত্র সৃষ্টি। উপর আর নিচের স্ফীত নেত্র পল্লব একত্রিত আর পিন এর মত ছোট ছিদ্র করে রাখে যা থেকে পিউপিল বা চক্ষু মণি বেরিয়ে থাকে।এদের চোখ দু’টি আলাদা আলাদাভাবে ১৮০ ডিগ্রী কোণে রোটেট করতে ও আলাদা ফোকাস গঠনে সক্ষম যার জন্য এরা একই সময়ে দুইটি আলাদা আলাদা দৃশ্যবস্তু দেখতে পায়। আর এই ব্যপার টা এদের ৩৬০ ডিগ্রী দৃষ্টি ক্ষেত্র বা ফিল্ড ভিশন তৈরি করে দেয়। এরা ৫-১০ মিটার দুরের ছোট কীটপতঙ্গ ও দেখতে পায়। মজার ব্যপার হলো বহুরূপী রা দৃশ্যমান ও অতিবেগুনী দুই রকম আলোতে ই দেখতে পায়। ০.০৭ সেকেন্ড এ ও প্রায় ৪১g বলে এরা এদের জিহ্বা কে শিকারের দিকে ছুড়ে মারে। (১g=৯.৮N বল) ভাবা যায়!! চোখের পলকের ও আগে এরা এই কাজ করে!! কি খায় এরা?? এদের শিকার কারা? মূলত এরা বড় আকারের পতঙ্গ যেমন ঘাসফড়িং, ঝিঝি,পঙ্গপাল, ইত্যাদি পতঙ্গ এমন কি কিছু কিছু বড় আকারের ক্যামেলিওন ছোট পাখির বাচ্চা khay.আরেকটি মজার ব্যপার হলো সাপের মত এদের কোনো কান/বাহ্যিক শ্রবণ ইন্দ্রীয় নেই তবুও এরা শুনতে পায়!! এরা ২০০-৬০০ হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। এরা ওভিপ্যারাস অর্থাৎ ডিম পাড়ার পর তাতে স্পার্ম ছেঁড়ে নিষিক্ত করে। আবার কেউ কেউ (জ্যাকসন্স ক্যামেলিওন) ব্যাঙের মত ওভোভিপ্যারাস মানে ডিম মায়ের গায়ের সাথে পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন বাচ্চা ফোটার আগ পর্যন্ত লেগে থাকে।মাটিতে ১০-৩০ সেন্টিমিটার গর্ত খুড়ে ডিম পারে স্ত্রী ক্যামেলিওন, যৌন সঙ্গমের ৩-৬ সপ্তাহ পর। ব্রুকেশিয়া জাতীয় ক্যামেলিওন ২-৪ টি , আবার লার্জ ভেইলড ক্যামেলিওন ২০-২০০ টি, প্যান্থার ক্যামেলিওন ১০-৪০ টি ডিম পাড়ে যা প্রায় ৪-১২ মাস পর ফুটে বাচ্চা বের হয়। আচ্ছা মানুষের রোগ নিয়ে কত আলোচনা! ওদের রোগ হয় না!! হবে না কেনো? ওদের ও রোগ ব্যধি হয়। তবে বেচারা রা সবচেয়ে বেশী ভোগে নানারকম প্যারাসাইটের সংক্রমনে। নেমাটোডা, রা তো এদের যাচ্ছেতাই হাল করে ছাড়ে। এছাড়া ও প্লাসমোডিয়াম!!(ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী) , ট্রাইপ্যানোসমা (বেচারাদের ঘুমের অসুবিধা বানায়), লিশম্যানিয়া (লিশম্যানিয়াসিস রোগ সৃষ্টিকারী) ইত্যাদি পরজীবি দ্বারা ও এরা আক্রান্ত হয়। কিছু কিছু ক্যামেলিওনের মাথায় শিং এর মত ঝুঁটি ও দেখা যায়!! আহা স্বাদ কত!! গুতা দিতে চায় নাকি!!
লেখক > জহির রায়হান, শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...