ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের ইতিহাস ▪️ (পর্ব-২)

চরখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের ইতিহাস ▪️ (পর্ব-২)

নূর হোসাইন মোল্লা ↪️ (পূর্ব প্রকাশের পর)

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টভুক্ত গণতন্ত্রী দলের সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা ও বামনা আসন থেকে মুসলীগের প্রার্থী খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দেরকে প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পূর্ব বাংলা আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মঠবাড়িয়া-গুলিসাখালী-বান্ধবপাড়া-মানিকখালী-মুন্সীরহাট হয়ে পাঘরঘাটা পর্যন্ত রাস্তা নির্মানের ব্যবস্থা করেন। এ রাস্তা নির্মানের ফলে মঠবাড়িয়া থেকে পাথরঘাটা যাতায়াতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যায়। ১৯৬২ সালে খান সাহেব হাতেম আলী জমাদ্দার মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা-বামনা আসন থেকে এম.পি.এ. নির্বাচিত হন। জাতীয় নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের ভাগ্নি জামাতা আমুয়ার এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সিকদার পিরোজপুর আসন থেকে এম,এন,এ নির্বাচিত হন। খান সাহেব হাতেম আলীর চেষ্টায় মঠবাড়িয়া-তুষখালী রাস্তায় আংশিক ইট সলিং হয়।
১৯৬৫ সালে এম,এ জব্বার ইঞ্জিনিয়ার মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা-বামনা আসন থেকে এম.পি.এ. নির্বাচিত হন। তাঁর চেষ্টায় মঠবাড়িয়া-তুষখালী রাস্তায় সম্পূর্ণ ইট সলিং হয়। ১৯৬৫ সালে পিরোজপুর আসন থেকে এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সিকদার পুনরায় এম,এন,এ নির্বাচিত হন। তিনি একই সাথে জেলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এ সময় মহিউদ্দিন আহমেদের ভাতিজা ডাঃ সামসুল আলম (মরহুম) হলতা-গুলিসাখালী ইউনিয়ন কাউন্সিলের (বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সিকদার এম,এন,এ এর মাধ্যমে জেলা বোর্ডের অর্থে এ সময়ে ডাঃ সামসুল আলম (মরহুম) মঠবাড়িয়া-বান্ধবপাড়া রাস্তায় সিংগল ইট সলিং এর ব্যবস্থা করেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ায় ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এ রাস্তায় কাজ হয়নি। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে বি,এন,পি সরকার গঠন করলেও মঠবাড়িয়া আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হন। পাথরঘাটা-বামনা আসন থেকে বি,এন,পি’র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আলমগীর নির্বাচিত হন। ভান্ডারিয়া-কাউখালী আসন থেকে ইসলামিক ডিমোক্রাটিক লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুর রহিম নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে মাওলানা আবদুর রহীম নিখিল পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর সহায়ক মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করেন। জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকালে তিনি নাগরিকত্ব ফিরিয়ে পান। ১৯৭৯-৮২ সাল পর্যন্ত এ রাস্তায় কোন উন্নয়ন হয়নি।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাবাহিনীর প্রধান লেঃ জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এক রক্তপাতহীন অভ্যূাত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি বরিশালের আবু জাফর মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খানকে প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা এবং পরে মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ১৯৮৪ সালে লেঃ জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর সামরিক সরকার বরিশাল-ভান্ডারিয়া-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা পাকা সড়ক নির্মানের সিদ্ধান্ত করেন। এ সময়ে এম এ জব্বার ইঞ্জিনিয়ার এ সড়কের মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা অংশ সাপলজা-চরদুয়ানী-পাথরঘাটা এলাইনমেন্টভুক্ত করার চেষ্টা করেন। অপরদিকে বরিশাল-ভান্ডারিয়া-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা অংশ গুলিসাখালী-মানিকখালী-মুন্সীরহাট-পাথরঘাটা এলাইনরমন্টভুক্ত করার জন্যে মঠবাড়িয়া এবং পাথরঘাটা উপজেলার ১৪ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর এবং মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা উপজেলার নির্বাহি অফিসারদ্বয়ের সুপরিশযুক্ত একখানা আবেদনপত্র সহ আমি (লেখক) এবং হলতা-গুলিসাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মিসেস পারুল আলম (মরহুম) ৩০/০৮/১৯৮৪ তারিখে মাননীয় যোগাযোহ মন্ত্রী আবু জাফর মোঃ ওবায়দুল্লাহ খানের সাথে সাক্ষাৎ করে উক্ত আবেদনপত্র খানা তাঁর বরাবরে পেশ করি। উল্লেখ্য আমাদের সাক্ষাতের পূর্বে জাতীয় নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ এ ব্যাপারে মানণীয় মন্ত্রীর সাথে ফোনালাপ করেন। অতঃপর আমরা এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ডেপুটি চীফ ইঞ্জিনিয়ার জনাব নূরুল আমিনের সাথে সাক্ষাৎ করি (এ সময়ে চীফ ইঞ্জিনিয়ার ঢাকার বাহিরে ছিলেল)।

লেখকঃ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সদস্য সচিব, মঠবাড়িয়া উপজেলা নাগরিক কমিটি।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...