খালিদ সাব্বির ✒️
সবেমাত্র প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। কী বা বুঝি তখন! আর তাছাড়া “চল তোকে আজ একটি সারপ্রাইজ দিব” টাইপের বাক্যের সাথে তখনো পরিচিত হইনি। তবে আব্বু-আম্মু সেদিন যা দেখিয়েছিলেন সেটাকে সারপ্রাইজড হওয়াই বলে। তাদের সফরসঙ্গী হয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম আম্মুর নতুন কর্মস্থলে। বিশাল বড় গেট পাড় হয়ে ভেতরে ঢুকতেই বিশাল বিশাল বিল্ডিং, মাঠ আর সাদা পোশাকের ছাত্রছাত্রী দেখে যে অঅনুভূতি হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হঠাৎ ঘণ্টা পেটানোর বিকট শব্দে ভয় পেয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আর এভাবেই প্রথম পরিচয় দক্ষিন বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কে, এম,লতীফ ইনস্টিটিউশনের সাথে। শুধু আমিই নয়, আমার মত হাজার হাজার মানুষের বেড়ে ওঠার পবিত্র স্থান, আবেগের কেন্দ্রবিন্দু এই কে,এম,লতীফ ইনস্টিটিউশন।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বললেই এর সম্পূর্ণ পরিচয় দেয়া যায় না। বরং এটি একটি জনপদের শিক্ষা-সভ্যতা-সংস্কৃতির সূতিকাগার। একটি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে একটি নগরী গড়ে ওঠা খুব প্রচলিত ঘটনা নয়। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সমাজ সংস্কারক হয়ে শুদ্ধ সামজিক দর্শনের, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার বীজ বপন করে একটি এলাকাকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে কে,এম, লতীফ ইনস্টিটিউশন। ঈদ এর নামাজ ছাড়া সম্ভবত আমদের এলাকায় এই একটি স্থানই আছে যেখানে দল মত নির্বিশেষে, ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসাথে জড়ো হয়। সেরকমই আর একবার সবাই হাতে হাত রেখে একত্রিত হয়েছে স্কুলটি জাতীয়করণের দাবি নিয়ে। দাবিটি মোটেই অযৌক্তিক নয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিদ্যালয়টি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি লাভ করে সেই ১৯৪৬ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে একাধিকবার মেধা তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করেছে। সর্বশেষ বরিশাল বোর্ডে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে এক যুগ আগেই। স্কুলটি এস,এসস,সি পরীক্ষার মূল কেন্দ্র হিসেবে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছে ১৯৬৩ সাল থেকে অর্থাৎ বাংলাদেশ জন্মেরও আগে।
উপজেলা শহর বিবেচনায় স্কুলটির একাডেমিক অবকাঠামো চমকে ওঠার মত। ৪টি দ্বি-তল, ১টি ত্রি-তল ও একটি একতলা ভবনের সাথে দুটি হোস্টেল ও ৩ টি মাঠ মিলিয়ে চলছে স্কুলটির শিক্ষা ও সহ শিক্ষা কার্যক্রম। এর বাইরে রয়েছে শিক্ষকদের জন্য আবাসিক ভবন ও নিজস্ব জমির উপর ৬০০টি বাণিজ্যিক স্টল। সব মিলিয়ে ১৫.৮৪ জমির উপর দাঁড়িয়ে এই মহীরুহ। শুধু ঐতিহ্যের উপরেই ভর করে দাঁড়িয়ে না থেকে সময়ের চাহিদার সাথে যোজন বিয়োজন করে স্কুলটিও যুগোপযোগী থেকেছে সব সময়। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মাল্টি প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম আছে প্রতিটি ক্লাসে।
স্কুলটির শিক্ষার্থী- শিক্ষক তো বটেই যারা এটির সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পায়নি তারাও স্কুলটির পরিচয় দিতে গর্ববোধ করে। কারণ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় স্কুলটি ২০/২৫ জন সচিবালয় কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ একাধিক সংসদ সদস্য,বিচারক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার, রাজনৈতিক নেতা, সফল ব্যবসায়ী ও দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য চাকুরীজীবী জন্ম দিয়েছে।
প্রায় দশ লক্ষ মানুষের প্রাণের স্পন্দন এই কে,এম,লতীফ ইনস্টিটিউশনকে জাতীয়করণের যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন জানিয়ে আগামী ২৩/০৯/১৭ ইং, শনিবার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীবৃন্দ কর্তৃক আয়োজিত মানব বন্ধনে অংশগ্রহণ করুণ ।
লেখক : খালিদ সাব্বির, প্রাক্তন ছাত্র, মঠবাড়িয়া কেেএম লতীফ ইনস্টিটিউশন।