মিনহাজ মুইন >>
সেকাল – ২০০১ থেকে ২০০৬,
তখনও ভর্তিযুদ্ধ ছিল। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেলাম। শুরু হলো মানুষ হওয়ার অনন্য এক ধাপ। হেড স্যার পেলাম শ্রদ্ধেয় নুরুল ইসলাম বি.এস.সি স্যার কে। ২০০৬ সালে কৃতিত্বের সাথেই এসএসমস পাস করলাম।
কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসাটা আজও চলমান। সে কালে পেয়েছিলাম অসাধারণ কিছু স্যার। যাদেরকে আজও দেখলে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করি।
আমি পেয়ে ছিলাম আব্দুল হাই স্যারের বেতের বাড়ি। যার একটি হাঁচিতে কেঁপে যেত পুরো স্কুল। পেয়ে ছিলাম খাদেম স্যার নামের একজন মানুষকে। যাকে ঘিরে চলতো স্কুলের সমস্ত ক্রীড়াযজ্ঞ। Tense নামক গ্রামারটা সর্বপ্রথম অমল স্যারের কাছ থেকে শিখেছিলাম। প্রমিত বাংলা উচ্চারণসহ বাংলা গ্রামার শিখে ছিলাম শ্রদ্ধেয় মোতালেব স্যারের কাছ থেকে। অংকের জটিল তত্ত্বের সমাধানে ছিল বিখ্যাত বি এস সি স্যার। হিসাব বিজ্ঞানের জন্য ছিল এমদুল স্যার। সহকারী শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম শ্রদ্ধেয় লতিফ স্যার কে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইংরেজি পড়াতে ভালোবাসতেন। সব মিলিয়ে একটা অসাধারণ গুণি শিক্ষক মন্ডলী আর শিক্ষার সাবলীল পরিবেশ। একুশের প্রভাতফেরি মানেই বাসুদেব স্যার।
এ ছাড়াও আরো অনেক স্যার ছিলেন সিংহ স্যার, পরিমল স্যার, জগবন্ধু স্যার, রণজিৎ স্যার,রবিউল স্যার সহ অন্যান্য স্যার বৃন্দ। যারা সবাই ছিলেন এক কথায় শিক্ষা গুরু হিসেবে অনন্য অসাধারণ। স্যাররা শুধু পাঠপুস্তকই পড়াতেন না। এর পাশাপাশি মানুষ গড়ার জন্য অন্যান্য কার্যক্রম ও পরিচালনা করতেন। জীবনের মূল্যবোধগুলো এসব গুণিজনদের কাছেই পাঠ নিয়েছি।
কে এম লতীফ ইনস্টিটিউশন থেকে পাস করে যেতেন যে সকল সাবেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্যাররা তাদের গল্প শুনাতেন আমাদের। আর আমরা ভালো মানুষ হতে উদ্বুদ্ধ হতাম। আহ ! সেই রোমাঞ্চকর সোনালী দিনগুলো। আজকের দিনগুলোর মত ছিল না কোনো নোংরা রাজনীতি। ছিল না কোনো বাণিজ্য সম্ভার। তাই সেই দিনের কেেএম লতীফ আমার স্মৃতিতে অম্লান। প্রিয় বিদ্যাপীঠ যদি সেই পুরানো দিনগুলি আবার যদি ফিরে পেতাম।
একাল- ২০১৪ থেকে২০১৭ চলমান
স্কুল কে ঘিরে চলছে নোংরা রাজনীতির আদর্শ এক খেলা। পক্ষ বিপক্ষ দুই গ্রুপিং। জিততেই যে হবে এ খেলায়। স্কুল আজ সি সি ক্যামেরার আওতাধীন। কি দরকার এই ক্যামেরার। এই প্রশ্নের উত্তর জানা নাই। দূর থেকে রাস্তা দিয়ে তাকালে মনে হয় স্কুল হচ্ছে একটি মিনি পার্ক। দেধারছে চলছে দোকান বাণিজ্য। ভালো পজিশন দখলে চলছে ব্যাপক প্রতিযোগিতা।দূরের ছাত্রদের থাকার আবাসনও আজ হুমকির মুখে। চলছে হরিলুট, চলুক। ব্যাংক একাউন্ট উঠুক ফুলে ফেঁপে। সম্ভবত আজকের যুগের স্যাররাও এই রাজনীতির কাছে জিম্মি।
এত দুর্ভাবনার ভেতর সম্প্রতি ভালো লাগার মতো একটি খবর ছিল ইন্টার ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে জেলার সেরা স্কুল হয়েছে আমাদের কে্.এম লতীফ। টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্কুল। এবার উত্তারঞ্চলে বন্যায় দুর্ত মানুষের প্রতি মানবিক সাড়া দিয়ে মোটা অংকের অর্থ দান করেছে জেলা প্রশাসকের কাছে।
পরিশেষে বলতে চাই, আমার স্কুল একটি আদি ঐতিহ্যর ধারক বাহক। বন্ধ হোক এই নোংরা রাজনীতি।বন্ধ হোক এই বাণিজ্য সম্ভার খেলা। আমাদের প্রিয় স্কুলের ঐতিহ্য অটুট থাকুক । না হলে আমাদের মূল্যবোধ, আমাদের সামাজিক উদ্যোগ গুলো মরে যাবে। আমরা কখনই তাই চাইনা । আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মেধা ও মননে অনন্য হয়ে বেঁচে থাকুক।
পুনশ্চ : আমি একজন কে এম লতিফের ছাত্র ছিলাম। এ আমার গর্বের পরিচয়।
লেখক > মিনহাজ মুইন, সাবেক শিক্ষর্থী,কেএম লতীফ ইনস্টিটিউশন।