ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মানুষেরও অধিক এক মানুষ

মানুষেরও অধিক এক মানুষ

সীমান্ত হাসনাইন পান্থ >>

১৫ আগস্ট এলেই মনে হয় এই দিন আমার পরিবারের কোনো আপনজন বুঝি শহীদ হয়েছিলেন আর এই অনুভূতির পেছনে গল্পটা অদ্ভুত ছোট বেলায় যখন অল্প অল্প কথা বলতে শিখেছি হাটতে শিখেছি তখন থেকেই ঘরের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর বড় ছবি টাঙানো ছিল ছবি দেখে মনে হতো হয়তো তিনি আমাদের আপন কেউ কিন্তু আমাদের সাথে থাকে না একটু বড় হতে থাকলাম আর জানতে থাকলাম ছবির মানুষটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, কি অদ্ভুত স্বাধীনতা সেটা আবার কি এই কৌতুহল মেটাতে পরিবারের বয় বৃদ্ধরা আমায় রূপকথার গল্প শোনায়। শোনার সময় আমাকে শোনালো বঙ্গবন্ধু,স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের গল্প ।

চাকরির প্রয়োজনে বাবা দেশের বাইরে থাকতেন তাই আমার ছোটবেলা কেটেছে আমার নানা,নানী,আর মামাদের সাথে । ছোট বেলায় মা আর নানীর মুখে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার নানা জনাব নুরুল ইসলাম (বি এস সি) যিনি ছিলেন মঠবাড়িয়া ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা । তাকে মঠবাড়িয়া থেকে রাজাকারদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় । সেদিন আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি বেঁচে যান । কিন্তু আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ জীবন যাপন করা এই মানুষটাকে দেখে দেখে ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখে ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুকে মনে হতো খুব আপন কেউ । যিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন ! মনে পড়ে ছোট থেকেই নানুর হাত ধরে ফুল নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতাম। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চ এর ভাষণ মুখস্থ করে নানুকে শোনালে মিলতো উপহার। এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে আমার বেড়ে ওঠা । মজার ব্যাপার জীবনের প্রথম লেখা কবিতাটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছিলাম ক্লাশ থ্রিতে বসে । কবিতাটি স্থান পেয়েছিল স্কুলের দেয়াল পত্রিকায় । হঠাৎ করে বি এন পি ক্ষমতায় এসে পনরোই আগস্ট শোক দিবস বন্ধ করে জাতীয় ছুটি স্থগিত করে। তখন আমি স্কুলে পড়ি মনে আছে, আমি একা কালো ব্যাজ লাগিয়ে ক্লাস করেছি । বাসার সামনে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছেড়ে পনরোই আগস্ট পালন করেছিলাম ।
সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম অনেক বড় হয়ে ,কবিতার প্রতি ভালোবাসা থেকে স্বরচিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছি । আবৃত্তি শিখতে যথারীতি কর্মশালা শেষ হওয়ার পর সবার স্টেজে একটা করে কবিতা পড়তে হবে তো আমি সিলেক্ট করলাম নির্মলেন্দু গুণ রচিত ‘সেই রাতের কল্পকাহিনী ‘কবিতাটি । কবিতাটি নিয়ে যখন শ্রদ্ধেয় মাহি ভাইয়ের কাছে গেলাম তিনি শুধু বললেন এই কবিতার অনেক ওজন পারবি এত অল্প বয়সে ? আবৃত্তি করতে? তাকে আশ্বস্ত করে যখন অনুশীলন করা শুরু করলাম তখনই শুরু হলো আসল সমস্যা কবিতাটির শেষে কয়েকটি লাইন আছে”
তোমার নিষ্প্রাণ দেহখানি সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে, গড়াতে, গড়াতে আমাদের পায়ের তলায় এসে হুমড়ি খেয়ে থামলো।
– কিন্তু তোমার রক্তস্রোত থামলো না।”
আমি যখনই কবিতাটি পড়তে পড়তে এই লাইনে আসি ঠিক তখনই আমার গলা ধরে আসে চোখ ভেঙে কান্না আসে ! আমি কোনোভাবেই আর পড়তে পারি না। আমি সত্যিই কবিতাটি পড়তে পারিনি আর হয়তো কোনোদিনও পড়তে পারবোনা ।
আবৃত্তি শিক্ষক মাহি ভাই ঠিকই বলেছিলেন, অতবড় লাশের ভার সওয়ার মতো মানসিক শক্তি আমার নাই। আল্লাহর কি লীলাখেলা জীবন চলার পথে এমন এক বন্ধু পেয়েছি যার লেখা বঙ্গবন্ধুর প্রতি চিঠি ছাপা হয়েছে বৃত্তান্ত ৭১কর্তৃক আয়োজিত ‘প্রতি জাতির পিতা বইতে’
এই গল্পটা শুধু আমার না আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যর জন্য প্রযোজ্য । হয়তো আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এভাবেই বেড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুকে তাদের পরিবারের একজন মনে করে।
তিনি এক বিস্ময়কর মানুষ !মানুষেরও অধিক এক মানুষ !! তিনি আমাদের স্বজন ।

১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তাঁর পরিবারের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি …।

লেখক > আবৃত্তি শিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...