ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী ?

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী ?

মো. তরিকুল ইসলাম রুবেল ♦

বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে চলছে ব্যাপক বিতর্ক৷ এই আইনে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের নামে মামলা, আটক ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয় এবং হচ্ছে। তাই আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্র সম্পাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ।

২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য-প্রযুক্তি আইনে সংশোধন আনা হয় ২০১৩ সালে৷ সে বছরের ৮ই অক্টোবর সংসদে আইনটি সংশোধীত আকারে পাশ হওয়ার পরও অব্যাহত ছিল এর সমালোচনা৷ আইসিটি আইনের কিছু ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তখন এক বিবৃতি বলেছিল, ‘‘মানবাধিকার কর্মীদের উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে শাস্তির পরিমাণ আরও কঠিনতর করা হয়েছে আইনে৷ এছাড়া সংশোধিত এ আইনে পুলিশকে সরাসরি মামলা করার ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে , যা সাংবিধানিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য৷”

কী আছে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায়….?
=> (১ উপ-ধারা):
‘কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷’

=>(উপ-ধারা ২):
‘কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যূনতম সাত বৎসর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷’]

‘‘আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় সাতটি বড় ধরনের অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়, এগুলো হলোঃ
=> মিথ্যা ও অশ্লীল, নীতিভ্রষ্টতা, মানহানি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি৷”

‘‘ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচারের কথা বলা হচ্ছে যা হবে মিথ্যা বা অশ্লীল৷ কিন্তু সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নীতি বা নৈতিকতার কথা বলা থাকলেও কোন কোন বিষয়বস্তুকে অশ্লীল বা মিথ্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে, তা এই ধারায় সুস্পষ্ট করা হয়নি৷ এক্ষেত্রে এ আইনটি সুনির্দিষ্টতার অভাবের কারণে দুষ্ট৷”
এ কারণেই এই আইনের অপপ্রয়োগের সুযোগ আছে বা অপপ্রয়োগ চলছে। ‘‘নিরাপত্তা না পেয়ে হয়ে যিনি ফেসবুকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন, তাঁকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দেয়া মামলায় আটক করা অস্বাভাবিক৷ এখানেও আইনের অপপ্রয়োগ স্পষ্ট৷”
‘‘সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক৷ এই ধারাটি সংবাদপত্র ও নাগরিকের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে, যা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি৷ ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের সব নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকের বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে৷”

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার প্রয়োগ যদি প্রচলিত থাকে, তাহলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে অপছন্দের যে কাউকে দমন-পীড়ন চালানো যাবে৷ এমনিতেই মানুষ আতঙ্কে রয়েছে৷ আর এই আতঙ্ক থাকলে আর যাই হোক চিন্তার স্বাধীনতা থাকে না৷ আর এরই মধ্যে এই আইনটির অপব্যাহারের শিকার হয়েছেন অনেকে৷”

এই আইনটি বাকস্বাধীনতা হরণের পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে হয়রানির একটি মোক্ষম অস্ত্র ৷ কারণ এই আইনে এমন সব অপরাধের কথা বলা হয়েছে, যেসব অপরাধের ব্যখ্যা নেই৷ তাই ইচ্ছে মতো এই আইনের অপব্যবহার সম্ভব৷” তাই অবিলম্বে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি উঠে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহলে।
প্রসঙ্গত, আইনটি নিয়ে সরকারের মধ্যেও মতবিরোধ আছে৷ সরকারের একাংশ মনে করে, আইনটির অপপ্রয়োগ হচ্ছে এবং এটি বাতিল অথবা অপপ্রয়োগ যাতে না হয় তার জন্য আইনে সুনির্দিষ্ট সুরক্ষা ধারা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন৷

লেথক > মো. তরিকুল ইসলাম রুবেল,এল, এল, বি (অনার্স), এল, এল, এম।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...