ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - স্বরূপকাঠীর নৌকারহাট

স্বরূপকাঠীর নৌকারহাট

খালিদ আবু ,পিরোজপুর >>
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষাকাল। বর্ষার পানি নদীর দু’কূল ছাপিয়ে ভরে ওঠে খাল-বিল, জমিজমা ও পুকুর। এমনকি বর্ষার পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট-বাড়িঘরও। তাই এসময়ে পিরোজপুর জেলার বিল ও চরাঞ্চাচলের মানুষের জীবন-জীবিকা ও চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা ছাড়া যেন বিকল্প নেই। তাইতো এসব এলাকার মানুষের প্রয়োজনে যুগ যুগ ধরে স্বরূপকাঠী উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা এলাকায় বসছে নৌকারহাট।
বাংলা জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের শেষ সময় পর্যন্ত সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার আটঘর বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় জলে ও ডাঙ্গায় বসে এ নয়নাভিরাম নৌকারহাট। রেইনট্রি, মেহগীনি ও কড়াই কাঠের তৈরী নৌকাগুলো থাকে হাটের খালের জলে ও ডাঙ্গায় প্রায় আধা কিলোমটির জায়গা জুড়ে ।
সরেজমিনে শুক্রবার নৌকারহাট ঘুরে দেখা গেছে, কেবল নৌকা আর নৌকা। আধুনিক সভ্যতায় যান্ত্রিক নানান ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ট্রলারের রাজত্ব থাকলেও, এখানকার মানুষের কাছে নৌকার কদর শত শত বছর ধরে। গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহ, কৃষিকাজ পরিচর্যা, গো-খাদ্য সংগ্রহ, ভাসমান সবজির বাজারে বিকিকিনিসহ যাবতীয় কাজে নৌকাই এখানকার মানুষের প্রধান ভরসা। আর তাই প্রয়োজনমত নৌকা সংগ্রহ করতে ক্রেতারা চলে আসছে আটঘরের এ বিখ্যাত নৌকারহাটে। চলতি আষাঢ়ের বর্ষার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্রেতা, বিক্রেতা আর নৌহাট দেখার মানুষের সমাগমে ভরপুর আটঘর এলাকা। এ যেন নৌকা বিকিকিনির এক মিলনমেলা।
হাটে কথা হয় ইলুহার গ্রামের নৌকা বিক্রেতা মোঃ মনির হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে গো-খাদ্য সংগ্রহ, কুড়িয়ানার পেয়ারা পারাসহ ভাসমান সবজির বাজারে ব্যবসার কাজে এখানকার মানুষের কাছে নৌকার কদর অনেক। তবে, সাধারনত আটঘর কুড়িয়ানা ও ঝালকাঠি অঞ্চলের মানুষেরা গাছ থেকে পেয়ারা সংগ্রহের কাজেই বেশি নৌকা কিনে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িসহ জলাবাড়ি, সোহাগদল, বলদিয়া, গুয়ারেখা ও সিমান্তবর্তী ঝালকাঠি জেলার শত শত লোক এ হাটে আসে নৌকা ক্রয়ের জন্য। মনির জানায়, আজকের হাটে সে বিক্রির জন্য ২৭টি নৌকা নিয়ে এসেছে। আকার ও কাঠের প্রকারভেদে একেক নৌকার একেক রকমের দাম রয়েছে। মনির আরো বলেন, সে গ্রাম থেকে ঘুরে ঘুরে নৌকা কিনে প্রতি হাটে একসাথে ২০-৩০টি নৌকা নিয়ে আসে। হাটে চম্বল কাঠের নৌকা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। একটি আটহাতি চম্বল কাঠের তৈরী নৌকা তিনি বিক্রি করেন দু‘হাজার থেকে ২২শ’ টাকায়। এতে তিনি খরচপাতি পুষিয়ে মোটামুটি লাভের মুখ দেখছেন।
উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের নৌকা তৈরীর কারিগর মোঃ আজমল হোসেন (৫০) জানান, পনের বছর ধরে তিনি এ হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসেন। আজকের হাটে সে ১৫টি নৌকা নিয়ে এসেছেন। বেঁচাবিক্রি ভাল। তিনি জানান, একটি ১২ হাতি নৌকা তৈরীতে একজন কারিগরের সময় লাগে ৩/৪দিন। যার মজুরি ও কাঠ-লোহা মিলিয়ে খরচ পড়ে ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা। হাটে সেই নৌকাটি বিক্রি হয় ৩ হাজার ৭শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায়। হাটে সাধারনত আট হাত ও দশহাতি নৌকার চাহিদা বেশি ।
নৌকা বিক্রির সময় সাথে বৈঠা না দেয়ায় নৌকার হাটের সাথেই রাস্তার উপরে একপাশে বসে আলাদা বৈঠার হাট বিলাতি গাব, মেহগীনি ও আমইর কাঠ দিয়ে বানানো হয় বৈঠাগুলো। হাটে বিলাতি গাব ও আমইর কাঠের বৈঠার চাহিদা বেশি।
বলদিয়া ইউনিয়নের চামী গ্রামের বৈঠা বিক্রেতা মোঃ মহাসিন (৪৫) জানান, হাটে সে ১০৭টি বৈঠা নিয়ে এসেছেন। প্রতি হাটেই তিনি এ ভাবে বৈঠা নিয়ে আসেন। বেঁচা-বিক্রি মুটামুটি ভাল। তবে নৌকার মত বৈঠা বেশি বিক্রি হয়না। কারন একটি আমইর কাঠ ও বিলাতি গাবের বৈঠা অনেক বছর থাকে।
হাটের ইজারাদার মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, প্রতিহাটে এখানে সহ¯্রাধিক নৌকা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। হাটে বিভিন্নœ আকারের ৬০০/৭০০ খানা নৌকা বিক্রি হয়। হাটে শতকড়া দশ টাকা হারে খাজনা নেয়া হয়।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...