ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মঠবাড়িয়ার ঐতিহ্যের কাঠ মসজিদের জ্বীর্ণদশা !

মঠবাড়িয়ার ঐতিহ্যের কাঠ মসজিদের জ্বীর্ণদশা !

দেবদাস মজুমদার >>

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নিভৃত পল্লী উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামে কাঠের তৈরি ঐতিহ্যবাহী মমিন জামে মসজিদটির এখন ভগ্নদশা। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি শত বছরের পুরনো মসজিদটি ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা দিয়ে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়।

কিন্তু তার পরেও মসজিদটি কার্যকর কোনো সুরক্ষার ছোঁয়া পায়নি। এটি বাংলাদেশের একমাত্র কাঠের মসজিদ হিসেবে স্বীকৃত।

ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মঠবাড়িয়ার মরহুম মৌলভী মমিন উদ্দিন আকনের একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলা ১৯১৩ সালে মঠবাড়িয়ার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের আকনবাড়ির সামনে মসজিদটি নির্মিত হয়। তৎকালীন দিল্লির ২২ জন কাঠমিস্ত্রি মিলে কোনো লোহার পেরেক ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করে। মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোক্তা মৌলভী মমিন উদ্দিন আকনের নামের সঙ্গে মিল রেখে পরে এর নামকরণ হয় মমিন মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটির জন্য উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের মূল সড়কটিও মমিন মসজিদ সড়ক নামে নামকরণ করা হয়েছে। কাঠের মসজিদটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম মসজিদের ২৩তম স্থান দখল করে আছে। ইউনিসেফ প্রকাশিত বিশ্বের অন্যতম মসজিদ নিয়ে প্রকাশিত ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ে কাঠের এ মসজিদটির সচিত্র বর্ণনা স্থান পেয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন মুসলিম স্থাপত্যকলার একটি নিদর্শন। সম্পূর্ণ কাঠের নির্মিত কারুকার্য ও কোরিওগ্রাফি খচিত এই মসজিদটিতে কোনো ধরনের লোহা বা তারকাঁটা ব্যবহার করা হয়নি। বাংলাদেশের সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত মসজিদের মধ্যে যেগুলো বেশি গুরুত্ব বহন করে, সেই সব মসজিদের ছবি জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়। মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদেরও কয়েকটি আলোকচিত্র (বর্ণনাসহ) জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

স্থানীয়রা জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই মসজিদটির মেঝেতে পানি পড়ে। এ কারণে ফ্লোরম্যাট, কার্পেট, পাটি ও জায়নামাজ বিছানো যাচ্ছে না। মসজিদের টিনের ছাউনিতে মরিচা ধরে নাজুক অবস্থা। টিনের কার্নিশ ছোট, যে কারণে মসজিদের মূল ভবনের সৌন্দর্য রোদ-বৃষ্টির ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশগত কারণে ফ্লোরের উচ্চতা কমে গেছে। বর্তমানে মাটি থেকে মসজিদের ভিত্তি মাত্র দেড় ফুট উঁচু।

মুসল্লিরা জানান, মসজিদটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদের বারান্দা বাড়ানো হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন দুই পর্বে এলাকার শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়। দুই পর্বে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিত কোরআন শেখে।

মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোক্তা মৌলভী মমিন উদ্দিন আকনের নাতি আবুল কালাম আজাদ উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানে মসজিদটি দেখভাল করছেন। তিনি জানান, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মসজিদটি সাতজন কাঠমিস্ত্রি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। ওই সময় মসজিদে নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, যা পুরনো মসজিদের কারুকার্যের সঙ্গে মিল নেই। সংস্কারের কাঠ ঘুণে ধরেছে। মসজিদটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি কিন্তু সংস্কারের নামে লোহার পেরেক ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি চালার টিনের ওপর খোদাই করা আল্লাহু লেখা কাঠের ফলকটিও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ধানিসাফা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুণ তালুকদার বলেন, ‘মমিন মসজিদটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি সুরক্ষায় সরকারের সহযোগিতা জরুরি। সেই সঙ্গে স্থানীয় দায়িত্বশীল লোকের প্রয়োজন। ’

সূত্র >> কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...