ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - “মা” তুমি ভাল থাকলে আমি ভাল থাকব

“মা” তুমি ভাল থাকলে আমি ভাল থাকব

“যে গর্ভে তোমাকে ধারন করেছে, সে গর্ভধারিনী মায়ের প্রতি কর্তব্য কর ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর”।

– আল-কোরআন।

প্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা! মাতা-পিতার সন্তুষ্টির মাঝেই নিহিত রয়েছে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি। আর তাই হাদিসে কুদসিতে উল্লেখ আছে যে, “মার রাযিয়া আনহু ওয়ালিদাহু ফাআলা আনহু রাযিন” অর্থাৎ যার প্রতি তার পিতা মাতা সন্তুষ্ট, আমিও তার প্রতি সন্তুষ্ট। হযরত রাসুলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। এক, মজলুমের দোয়া।

দুই, মুসাফিরের দোয়া। তিন, সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতার দোয়া। কবীরা গুনাহর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হল- এক, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। দুই, পিতা-মাতার সাথে নাফরমানি করা।

তিন, মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয়া অথবা বলেছেন মিথ্যা কথা বলা। (তিরমিজী শরীফ) রাসুলে কারীম (সঃ) পিতা-মাতার হক সম্পর্কে বলেন, তারা তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম। অর্থাৎ যে সন্তান পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করে, তাদের কথা মত চলে, তাদের সেবা যত্ন করে, ইচ্ছে করলে সে জান্নাতে যেতে পারে। আর ইচ্ছে করলে সন্তান পিতা-মাতাকে কষ্ট দিতে পারে, তাদেরকে নারাজ করতে পারে, আর তাহলে ঐ সন্তান জাহান্নামে যেতে পারে।

হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রাঃ) সেই ছাত্রজীবনে যখন পড়ার টেবিলে রাতে পড়তে ছিলেন। মা ঘুমের মধ্যে সন্তানের কাছে পানি চাইলেন। পানি নিয়ে যখন মায়ের কাছে আসলেন মা তখন আবার গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আদরের সন্তান পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন, মাকে ডেকে জাগানোও যাচ্ছে না, আবার মা কখন ডাক দেয়। প্রহর গুনতে গুনতে সকাল হয়ে গেল। ফজরে মা উঠে সন্তানকে পানি হাতে দেখে দুই হাত দিয়ে বুকের মধ্যে ধরে চুম্বন খেয়ে বললেন, বাবা দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে অনেক বড় করবেন। মায়ের দোয়ায় অনেক বড় হয়েছেন। তিনি মায়ের দোয়ায় বিশ্ববরন্য ওলি হয়েছেন। শুধু ইসলাম ধর্মে কেন? মা মাই, তার অন্য কোন চেহারা নেই।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর- হঠাৎ করে মায়ের চিঠি। মা খুব অসুস্থ্য। স্বল্প লেখায় মায়ের ডাক। তিনি তখন ছাত্র। চারদিকে ঝড়, বন্যা, বৃষ্টি। নদীর কাছে এসে দেখলেন কোন খেয়া নৌকা নেই। নদীর উম্মাতাল অবস্থা। রাতও গভীর। তিনি সৃষ্টি কর্তাকে স্মরন করে মায়ের ডাকে সারা দিয়ে সেই উম্মাতাল নদীতে নেমে সাতার দিয়ে সৃষ্টি কর্তার কৃপায় নদীর ওপাড়ে চলে আসলেন। উপড়ে উঠে ঝড়, বন্য, বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘরের উঠানে গিয়ে মাকে ডাক দিলেন। মা তার আদরের সন্তানকে এতো রাতে ভিজা অবস্থায় দেখে অসুস্থ্য অবস্থায় বৃষ্টির মধ্যে নেমে ঈশ্বর চন্দ্রকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলেন। মা আর আদরের সন্তানের কান্নায় পৃথিবী ভারী হয়ে উঠেছে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধায় স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আনন্দিত হলেন। ঈশ্বর চন্দ্র মায়ের দোয়ায় অনেক বড় মাপের মানুষ হলেন। বিদ্যাসাগর উপাধী পেলেন।

“যে গৃহে মা নেই, সে গৃহের কোন আকর্ষন নেই”- হাওয়ার্ড জনসন। “পিতা-মাতা সম্পর্কে তোমার অন্তরে যদি সামান্যতম শ্রদ্ধাও থাকে তবে পিতা-মাতাকে গালি দিওনা”-আ মেলি যে মা তাঁর সন্তানকে ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারন করেছেন, নিজে জীবনের তোয়াক্কা না করে আদরের সন্তানকে সুরক্ষিত রেখেছেন। সেই মাকে কিভাবে সুন্দর আশ্রয় হিসেবে গোয়াল ঘরে আশ্রয় দেয়। আবার এ সমাজ কিভাবে নীরবে মেনে নেয় তা বোধগম্য হয় না। মা কি পৃথিবীতে একজন-দুজনার? সবার যদি মা থেকে থাকে, এই মা তো ধর্ম গ্রন্থের বিষয় নয়। মা-তো মা-ই। মা তোমায় শতকোটি সালাম। তুমি ভাল থাকলে আমি ভাল থাকব। আমিন।

লেখক -মোঃ আলমগীর হোসেন খান অধ্যক্ষ, মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজ , মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...