“যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবানী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি” মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম এর কবিতায় প্রতীয়মান হয়েছে সেই মধ্যযুগেও মা-মাটি-মানুষ-মাতৃভাষা-দেশ-জনপদ-অঞ্চল বিরোধীরা ছিলো। তাদের আগমন ঘটেছে ১৯৭১ সনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও। ওরা মহান স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে। ওরা আছে সকল ভাল কাজের বিপক্ষে। সকল ক্ষেত্রেই অপমানিত হয়েছে, কলংকিত হয়েছে, হেনস্তা হয়েছে তারপরও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। এমনকি একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করবেন সেখানেও বিরোধীতা করবে হয় প্রকাশ্যে, নয়তো গোপনে বা নীরবে ।
বাংলায় জন্মগ্রহণ করে যিনি বা যারা ইংরেজী, ফার্সি, উর্দু ভাষার জন্য প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে। বাংলাকে কুলি-মজুরের ভাষা বলে আখ্যায়িত করেছে, তারা কি জয়ী হতে পেরেছে? বাংলায় জন্মগ্রহন করে যিনি বা যারা বাংলার স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে। ইসলাম ধর্ম যায় বলে মানুষের মাঝে অপপ্রচার চালিয়েছে। স্বাধীনতাকামী মানুষদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা, লুটতরাজ, মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন করেও কি রাজাকার আলবদর, আলশামসরা জয়ী হতে পেরেছে? ওরা একসময় নারী শিক্ষা পাপ বলে বিরোধীতা করেছে। দেশের শিক্ষা বিস্তারে বিরোধীতা করেছে। বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের মধ্যদিয়ে নারী শিক্ষায় অগ্রগতি এনেছেন। সারা বাংলা কওমী মাদ্রাসাগুলোকে অন্ধকারে রেখে ওদের দ্বারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বিরোধী কথা বলার সাহস যুগিয়েছেন। আজ যখন দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাকে ১০০% শিক্ষিত জাতিতে পরিনত করার অংশ হিসেবে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে ৭টি কওমি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় এনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত জাতি হিসেবে সনদ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, চাকুরীর আওতায় নিয়ে এসেছেন, তাদের সেই পেতাত্মারা ঘুরে দাঁড়িয়ে, বিপক্ষে কথা বলছে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। মাতৃভূমিকে ১০০% শিক্ষিত জাতিতে পরিনত করতে হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী, অঞ্চল নির্বিশেষে সবাইকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলার সকল মানুষকে শিক্ষিত হতে হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা স্তর, শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা পদ্ধতির বিরোধিতা করা বিবেকহীন মানুষের কাজ। কবি আব্দুল হাকিমের ভাষায় তাদের জম্ম নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়।
সারা বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, নূরানী মাদ্রাসা, হেফজ খানা, মেডিকেল কলেজ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মন্দির ভিত্তিক পাঠশালা, প্যাগোডা ও গীর্জা ভিত্তিক পাঠশালা, আদি ভাষা-ভাষিদের ভাষা শিক্ষা পাঠশালা সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যখন সুন্দর পরিবেশে লেখা পড়া করে সনদ সহ বাংলাদেশে জাগরন সৃষ্টি হবে তখনই দেশ ১০০% শিক্ষিতের দেশে পরিনত হতে থাকবে। আর নিজের ও দেশের প্রয়োজনে নিন্দকদের ঘৃনা ও নিন্দা সহকারে প্রত্যাখান করতে হবে দিনের পর দিন। তাহলেই মাতৃভূমি নিরাপদ থাকবে সারাক্ষণ।
লেখক > আলমগীর হোসেন খান, অধ্যক্ষ, মিরুখালী স্কুল এন্ড কলেজ, মঠবাড়িয়া ।