ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - অতুলনীয়া মা

অতুলনীয়া মা

অন্যান্য সব বিষয়ের মত বাবা-মা’র প্রতি আবেগের বহিঃপ্রকাশ করতেও মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা কিছুটা বৃত্তবন্দী। তারা যখন তখন বাবা- মা কে জড়িয়ে ধরতে পারে না, গালে কপালে চুমু খেতে পারে না, মনে মনে হাজারবার আওড়ালেও চোখে চোখ রেখে ‘মা তোমাকে খুব ভালোবাসি ‘ কথাটি বলতে পারে না। বিশেষ দিবস হিসেবে মা-বাবাকে একটু চমকে দিতে চাইলেও সম্ভবত প্রজন্ম ব্যবধানের কারণে লজ্জা নামক শব্দটি তখন তাদের মাঝে অবস্থান নেয়। চার পা পিছিয়ে দূর থেকেই তারা বলে -অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাদের। বলতে না পারলেও অসুবিধে নেই। কারণ জিহ্বা অচল থাকলেও ভালোবাসা সচল থাকে এবং আলাদা দিবস বরাদ্দ না হলেও সে ভালোবাসায় মরিচা পড়ে না।

সকল মা কে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুরানো একটি লেখা আবারো তুলে ধরছি..

বাবুসোনা তোমার নাম কী?
তোমার আব্বুর নাম কী?
তোমার আব্বু কী করেন?
তোমার আম্মু কী করেন?
কে তোমাকে বেশী ভালবাসে;আব্বু না আম্নু?

সার্থকতার সাথে শিশুকাল পার করে বালেগকাল অর্জন করার জন্য বাঙালি শিশুদের জন্য অপরিহার্য প্রশ্ন এগুলো। জীবনে এ প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হয়নি এরকম আদমি পাওয়া বিরল। ধরে নিচ্ছি সরল মনেই প্রশ্নগুলো করা হয়। তথাপি উত্তর পিপাসু প্রশ্নকর্তাদের চতুর্থ ও পঞ্চম প্রশ্ন দুটো আরও কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। সেটা নিয়েই কিছু বলার খায়েশ অনুভব করছি এখন।

একটি পরিবারে মা কী করেন তা বোঝার জন্য রকেট সাইন্টিস্ট হওয়ার দরকার হয় না। বরং একজন সুস্থ মা কী করেন না সেটাই হতে পারে গবেষনার বিষয়। কাকডাকা ভোরে বিছানা ছাড়া থেকে শুরু করে গভীর রাতে বিছানা নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত মায়েরা বিশ্রাম নিতে জানেন না। কী কী কাজ করেন তার তালিকা করতে পারছি না। কারন দিনে আঠারো ঘন্টা মায়ের পিছু পিছু থেকে তার কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয় নি কখনো। শুধু মনে পড়ে সকালে ঘুম থেকেই উঠে দেখতাম নাস্তা রেডি, স্কুলে যাব মোজা খুঁজে পাচ্ছিনা–মা হাজির, বাবা বাইরে যাবেন- তাঁর চশমা,মানিব্যাগ কোথায়? কী পড়ে বাইরে বের হবেন?- তা ঠিক করে দিচ্ছেন মা। স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখি ঘড়টা ঝকঝকে তকতকে –এটাও মায়ের ষড়যন্ত্র। স্যারের বেত খাওয়ার পর বাসায় এসে কি খেতে মন চাইতে পারে গোপনে তাও জেনে গেছেন মা এবং খাবার টেবিলে তা হাজির। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে বাসায় ফিরিনি, খুঁজতে বেরিয়েছেন মা। সন্ধাবেলা এক ঝুড়ি মাছ নিয়ে হাজির বাবা। মাছ এবং বাবা দুটোকেই সাইজ করার জন্য–মা। রাত জেগে পড়ব ;কতক্ষন পরপর ঘুমাও ঘুমাও বলে সাইরেন বাজানোর জন্য মা। হাজারটা আবদারের পূণ্যভূমি – মা। আমার তিনজন মানুষের একটা অতি ক্ষুদ্র পরিবারে মায়ের এত কি কাজ তা ভেবে পাই না। বড় বা একান্নবর্তী পরিবারের মায়েদের অবস্থা ভাবার সাহসই করি না। আবার চাকরিজীবী মায়েরা সকল গৃহস্থলি কাজ বাদ দিয়ে শুধু চাকরিটাই করবেন আর কেউ এসে তাদের মুখে তুলে খাওয়াবেন এমন স্বর্গীয় সুখ লাভের সৌভাগ্য হয় না তাদের।সবকিছু ম্যানেজ করেই তাদের চাকরিজীবন সচল রাখতে হয়।

শীতকালে গ্রামের একজন গৃহিনী মা একই সাথে ধান শুকানো, ধান গোলায় নেয়া, গরু, মহিষ, হাস, মুরগী পালন, গুড় বানানো, মুড়ি ভাজার কাজগুলো উপঢৌকন হিসেবে পেয়ে থাকেন।

সরল দৃষ্টিতে মায়ের কাজগুলো এভাবেই ধরা পড়ে। আর কঠিন হিসাব নিকাশ করতে সুলতানা কামাল বা দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যদের দুয়ারে গেলে তারা বলেন এক অর্থবছরে বাংলাদেশে মায়েদের ঘড়ের কাজের আনুমানিক মুল্য আড়াই লাখ কোটি টাকা। তারা আরো বলেন গৃহস্থলি ও সেবামূলক কাজে দৈনিক আঠারো ঘন্টা সময় ব্যয় করেন এদেশের একজন নারী। গুনি মানুষগুলো সম্ভবত গুল মারেন নি।

স্কুল জীবন তো বটেই কলেজ জীবনেও দেখেছি গুণধরেরা, বাবা কী করেণ এ প্রশ্নের উত্তরে জিওসি বা ব্রিগেডিয়ার বলে গগন কাঁপানোর পরে মা হোমমেকার বা গৃহিনী কথাটি এত নিশকন্টক মিহি সুরে বলে যেন গৃহিনী হওয়া একটি অপরাধ। তবে প্রশ্নটি করাটাও সুবিবেচনাপ্রসূত মনে হয় না আমার কাছে। কারণ চাকরিজীবী হোক আর না হোক সংসারে মায়ের কাজ সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
তাই, ‘মা কী করেন?’ প্রশ্নের একটিই উত্তর হতে পারে-

মা কী করেন না?

পঞ্চম প্রশ্নটি নিয়ে ভবিষ্যৎ এ লিখব।

লেথক : খালিদ সাব্বির, সহকারী জজ ও পাঠাগার আন্দোলন কর্মী ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...