ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - পুলিশি হয়রানির শিকার হলে কি করবেন?

পুলিশি হয়রানির শিকার হলে কি করবেন?

সুপ্রিয় সুধী, শুভেচ্ছা নিবেন। মঠবাড়িয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে আলোচিত এবং বহুল পরিচিত অনলাইন পত্রিকা “আজকের মঠবাড়িয়া”য় নিয়মিত আইনী পরামর্শ বিষয়ক কিছু কথা লিখে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় গত পর্বের বিষয় ছিলো “থানায় কিভাবে এবং কেনো জিডি করবেন?” আর আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তা হলোঃ
★পুলিশি হয়রানির শিকার হলে কি করবেন?
♦প্রথমে জেনে নেই পুলিশ বাহিনী সম্পর্কেঃ-
সরকারি আদেশ সংরক্ষণ, অপরাধ রোধ, অপরাধীদের ধরার জন্য সরকার কর্তৃক পরিচালিত একটি সংস্থা যার নাম পুলিশ। ইংরেজী শব্দ POLICE এর বিশদভাবে বিশ্লেষণ করলে এর অর্থ এমন যে, Protection of Life in civil establishment অর্থাৎ নাগরিক বা নাগরিক প্রতিষ্ঠানের জীবন রক্ষা করা।
আবার আক্ষরিকভাবে ব্যাখ্যা করলে পাওয়া যায় এভাবে-
P – Polite – শিষ্টাচারযুক্ত
O – Obedient – কর্তব্যপরায়ণ
L – Loyal – বিশ্বস্ত
I – Intelligent – বুদ্ধিমান/ বুদ্ধিদীপ্ত
C – Courageous – সাহসী/ নির্ভীক
E – Efficient – দক্ষ,
তারমানে এককথায় বলতে গেলে জনকল্যানে, জনগনের প্রতিটি সমস্যার সমাধান বা সুষ্ঠু নিরাপত্তার এক অতন্দ্র প্রহরী হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, যার রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বা ইতিহাসের আত্মত্যাগের এক জ্বলন্ত উদাহরন।
♦সম্মানিত নাগরিকবৃন্দঃ
শুরু করার আগে বলে নিই, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ সংগ্রামের গৌরবদীপ্ত এই বাহিনী তার নানা সীমাবদ্ধতা সত্বেও জনকল্যানে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় এই বাহিনীর ১০৯ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেন- এই ত্যাগের মাত্রাটি বাংলাদেশের যে কোন সংস্থার চাইতে বহুগুণ বেশি। কাজেই, ঢালাওভাবে কেউ যখন গোটা পুলিশকে গালাগালি করেন, আপনাদের জীবন রক্ষার্থে মৃত্যুবরণ করা ওই অফিসারদের আত্মা কষ্ট পায়, কষ্ট পায় তাঁদের আত্মীয় স্বজনেরা। যাঁরা বলেন যে বাংলাদেশ থেকে পুলিশ বাহিনী উঠিয়ে দেয়া হোক, তাঁদেরকে বিনীতভাবে ইউটিউবে গিয়ে “1969 Montreal Night Of Terror” ভিডিওটি দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। কানাডার মত দেশে সেই ১৯৬৯ এর মত প্রাচীনকালে পুলিশের সামান্য কর্মবিরতিতে কি অবস্থা হয়েছিল সেটা স্বচক্ষে দেখতে পাবেন।কাজেই, এদেশে পুলিশের বিকল্প নেই।
*সিদ্ধান্ত আমাদেরঃ আমরা কি রকম পুলিশ চাই- ভালো না খারাপ।
♦ভালো পুলিশ পেতে হলে নাগরিকদেরও কিছু কর্তব্য রয়েছে, সে বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করিঃ
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নাগরিকেরা নিজেদের অধিকার এবং আইন সম্পর্কে সচেতন নন, আর এই অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে থাকে কতিপয় দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ পুলিশ সদস্য। এই দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ পুলিশের অপকর্ম ঠেকাতে কঠোর বিভাগীয় শাস্তি যেমন প্রয়োজন, একইভাবে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা। আপনি একটু সচেতন হলে নিজেই অনেক পুলিশি ঝামেলা থেকে বেঁচে যেতে পারবেন।
♣ব্যাতিক্রমঃ
আমাদের দেশে ভি-আই-পি দের সংখ্যা একেবারে কম নয়, তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পথ খুঁজে নিতে সক্ষম। আমার এই লেখাটি একেবারেই সাধারণ মানুষদের জন্যে লেখা, আশা করি আপনাদের কাজে আসবে।
১) সন্দেহবশতঃ
৫৪ ধারায় যদি বিনা দোষে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হয়- জেনে নিন, ২৪ ঘন্টার বেশি আপনাকে আটক করে রাখার উপায় নেই। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে দ্রুত কোন আত্মীয়কে থানায় আসতে বলুন। অনেক সময় দেখা যায় বখাটেদের সাথে সাথে ওখানের নিরীহ ছেলেও ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় যদি থানায় এসে লিখিত দিতে পারে যে ধৃত ব্যক্তি তাঁর সাথে সম্পর্কিত, এবং সে যা পরিচয় দিচ্ছে সেটি সঠিক- এক্ষেত্রে আপনি ছাড়া পেয়ে যাবেন।
২) ধরে আনার কাজটা মূলত
করে কনষ্টেবল থেকে এস.আই পর্যায়ের অফিসারেরা। একটি থানায় তাদের নেতা হচ্ছেন ওসি। আপনি যদি ওসির সাথে (ওসি না থাকলে ইন্সপেক্টর-তদন্ত সাহেব) সরাসরি দেখা করে বা যোগাযোগ করে আপনার আত্মীয়ের নির্দোষিতা প্রমাণ করতে পারেন সেক্ষেত্রেও বিপদ কেটে যাবার কথা।
৩) এবার সবচাইতে স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলি। পুলিশ কর্তৃক নিরীহ মানুষকে আটক করে হয়রানির ভয় দেখিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগ খুব কমন এবং প্রচলিত। এসব ক্ষেত্রে যেটা হয়, ওই অসৎ অফিসার আপনাকে ভয় দেখান এবং আপনিও ভয়ে তার কথামত কাজ করেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং ডিএমপি এ্যাপ, এই দুটি নিজের মোবাইলে রাখুন, সেই সাথে নিজ থানার ওসি/ ওসি তদন্ত / ডিউটি অফিসার – এদের নম্বর রাখুন। আপনি যে এলাকার বাসিন্দা সে এলাকার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার/এসপি/সহকারী পুলিশ কমিশনার/ এএসপি – এঁদের ফোন নম্বর অবশ্যই ফোনে সেইভ করে রাখুন।আপনি যদি বিনা কারণে আটক হন এবং আপনি নিজে বা আপনার কোন আত্মীয় যদি এই সিনিয়র অফিসারদেরকে ফোনে জানাতে পারেন- তিনি অবশ্যই খোঁজ নেবেন ব্যাপারটি কি সেটা জানতে। এঁদের কাছ থেকেও আপনি সহায়তা পেতে পারেন।
৪) ধরে নিচ্ছি উপরের কোন স্টেপেই কোন কাজ হলনা, আপনি ওই অসৎ অফিসারের পাল্লায় পড়ে হয়রানির শিকার হলেন। এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হচ্ছে ছাড়া পাবার পর পুরো ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সহ লিখিত আকারে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মেট্রোপলিটন এলাকায় হলে) বা এসপি (জেলাতে) বরাবর পাঠানো। প্রয়োজনে আপনি সহকারী পুলিশ সুপার/ এডিশনাল এসপি এমনকী প্রয়োজনে এসপি/ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের সাথেও দেখা করতে পারেন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে ধাপে ধাপে স্বয়ং পুলিশ প্রধানের সাথে দেখা করার অধিকারও আপনার আছে। প্রয়োজন পড়লে এটি প্রয়োগ করুন।
৫) প্র্যাকটিকাল টিপস হচ্ছে, কোন অবস্থাতেই মাথা গরম করবেন না, নমনীয় থাকুন। নমনীয়তা মানে দুর্বলতা নয়, এর মানে আপনি নিজেকে ওই কর্কশ ব্যবহারকারী দুষ্ট অফিসারের পর্যায়ে নামিয়ে নিচ্ছেন না। খুব শান্তভাবে এবং সুকৌশলে তার নাম জেনে নিন এবং পরবর্তীতে ওই অফিসারের সিনিয়র অফিসারের কাছে এ ব্যাপারে তথ্য দিন।
৬) যে কাজটি করা থেকে বিরত থাকতে বারংবার অনুরোধ জানাচ্ছি সেটি হচ্ছে, বিপদ কেটে যাবার পর অন্যায়টিকে “হজম” করে ফেলা। ঘুষ দেয়া এবং ঘুষ নেয়া সমান অপরাধ- মাত্র ১০০/২০০ টাকা দিয়ে “ঝামেলা” এড়াতে এড়াতে আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গিয়েছি, যথাস্থানে নালিশ জানাতে অস্বীকার করছি। আমরা যেটা করি তা হচ্ছে, ওই ২০০/৩০০ টাকা ঘুষ বিনা প্রতিবাদে দিয়ে দিই, তারপর ফেইসবুকে বা অন্যান্য আয়ামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করি- যাতে মানসিক তৃপ্তি হলেও কাজের কাজ কিচ্ছু হয়না। আপনার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ওই ঘুষখোরের কিচ্ছু যায় আসে না। বরং আপনি যদি সুকৌশলে ওর নেমপ্লেট আর কাঁধের ব্যাজ-এ কয়টা দাগ আছে দেখে নিতেন (অথবা সুযোগ পেয়ে মোবাইলে ভিডিও/ছবি তুলে নিতেন)- এরপর সেগুলো দিয়ে তার উপর মহলে (ওসি ও তদোর্ধ্ব) নালিশ জানাতেন, তাতে ও ওই অপকর্মটি করার আগে দুইবার চিন্তা করত।
যে কথ্যটি বলি সেটিই আবার বলছি- ২০০ বছরের জঞ্জাল এক দিনে যাবেনা। কিন্তু আমরা পুলিশ বাহিনীর লোকজন যখন দেখবে, “আরে, আমাদের দেশের মানুষ তো আইন কানুন জানে, তাদের তো বেয়াড়া ধমক দিয়ে হয়রানি করা যায়না” তখন আমাদের ভেতরেও পরিবর্তন আসবে।
সেই সুদিনের প্রতীক্ষায় রইলাম।
লেখক : মো. তরিকুল ইসলাম রুবেল
এল, এল, বি (অনার্স), এল,এল,এম
(শিক্ষানবিশ আইনজীবী)
মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...