ব্রেকিং নিউজ

সাবলেট

ম্যারিনা নাসরীন >>

বিয়ের ঘটনাটি আচমকাই ঘটলো বা এমন হতে পারে ঘটবার অবশ্যম্ভাবিতাই ঘটনাটি ঘটাতে সাহায্য করেছিল। আমি অবশ্য কবুল পড়তে খুব বেশি সময় ব্যয় করিনি। হাড়িকাঠে গলা যখন দিতেই হবে দেরী কিসের? কনে পক্ষের সাক্ষী ছিল আমার খালাতো ভাই আজরাফ। ঘটকও সে। আমার প্রেমিক, আমার সখা। একসময় বাংলা সিনেমার পোকা ছিলাম। শাবানার ‘স্বামী কেন আসামি’ রাজ্জাকের ‘বাবা কেন চাকর’ সিনেমা দেখতে দেখতে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলেছি। ‘প্রেমিক কেন ঘটক’ এই নামে কোন সিনেমা আছে? থাকলেও জানা নেই। কারণ, এখন আমি সিনেমা দেখি না। জী বাংলা, স্টার জলসার সিরিয়াল দেখি। সিরিয়ালের নায়িকাদের মত সাজগোজ করি। মাঝে মধ্যে ঘরের ভেতর শাড়ি পড়ে লিপস্টিক ঠোঁটে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই। একবার বাবার সাথে জিদ করে ঈদে পাখির জামাও কিনে এনেছিলাম। যাই হোক, কথায় বলে জন্ম মৃত্যু বিয়ে এই তিনে কারো হাত নেই। কিন্তু আমার বিয়েতে যে আমার প্রেমিকের হাত ছিল সে ষোল আনাই সত্য। পাত্রের নাম খান মোহাম্মদ শফিক। আজরাফ ভাইয়ের বন্ধু মানুষ। পাশের গ্রামের খানদানী বংশের উত্তরাধিকারী। তবে বংশসূত্রে শধু পরিচয়টাই যা পেয়েছে আর সব ঠনঠন। তলাবিহীন ঝুড়ি। ভিটেটুকু ছাড়া চাষ যোগ্য এক কানি জমিও নেই। কাঁধের উপর মা, ছোট দুই ভাইবোন। সন্ধ্যায় এক বাস বরযাত্রী সহযোগে শফিক যাচ্ছিল বিয়ে করতে। কনের বাড়ি চুকনগর। বাড়ির কাছাকাছি যাবার পর খবর এল পাত্রী পলাতকা। আজরাফ ভাই বন্ধুবৎসল। প্রায় মধ্যরাতে বাস ঘুরিয়ে বর নিয়ে হাজির হয়েছে আমাদের বাড়িতে। তার আগে অবশ্য বাবার সাথে ফোনে ফোনে ঘটনা বহুদূর এগিয়েছিল। গোয়ালের গরু জবাই হয়েছে। মিল্লাত কাকার বাড়ি থেকে খাসিও একটা কিনে আনা হলো। রান্নাবাড়া শেষদিকে। অন্যদিন শেষ রাতে বিদ্যুৎ থাকে না। কি মনে করে আজ তিনিও আমার বিয়েতে উপস্থিত। আজরাফ ভাই এ কাজ কেন করল সে চিন্তা আমি অনেকবার করেও কূল পাইনি। বিয়েতে সবথেকে বেশি খুশি বাবা। ভেতরে ভেতরে এই খানদানী পাত্রের প্রতি তাঁর নাকি অনেক দিনের লোভ। গভীর রাতে বাবা সারা পাঞ্জাবীতে তিব্বত আতর মেখে খুসবন্ত চেহারা নিয়ে ঘুরে ঘুরে অতিথি আপ্যায়নের তদারকি করছেন। মায়ের মুখের সামনে এক হাত ঘোমটা। বোনের ছেলের অমর কীর্তিতে তিনি যার পর নাই গর্বিত। তার কারণও রয়েছে। ছেলে বিসিএস ক্যাডার। কলেজে পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম ক্যাডার মানেই চাইনিজ কুড়োল, বোমা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ক্যাডারে ক্যাডারেও যে এত ফারাক কে জানত? মা কিছুসময় পরপর বাবাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, নিজের মুরোদে তো বিসিএস (বিসিএস কি মা জানেন না তবে বাবার কাছে শুনে বুঝেছিলেন টাকা ওয়ালা কোন চাকরি হবে) ছেলে যোগাড় করতে পারলে না। শেষ পর্যন্ত আমার বোনপোই তোমার কালো মেয়ের আইবুড়ো নাম ঘুচাল। আমি একবার আই এ ফেল্টুস মেরে কোনমতে গতবছর পাশ করেছি। সদর কলেজে নামে বিএ পড়ি। দুমাসে একবার কলেজে যাই কি, যাই না। সারাদিন সিরিয়াল দেখা আর বিছানায় উপুড় হয়ে উপন্যাস পড়া ছাড়া কাজ নেই। ঘরে বাইরে চার চারজন কাজের লোক। প্লেট ধুতে গেলেও এক জন না একজন দৌড়ে আসে। চেহারা আমার খারাপ নয় তবে রঙটা চাপা। সবাই বলে দাদির রঙ পেয়েছি। দাদীর মত রঙ পেয়েছি বলেই কিনা জানি না, মা মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে আমাকে কালনিমে ডাকেন। আড়ালে আবডালে দাদিকে বলেন কালনিমে বুড়ি। কালো ধলা যাই হই না কেন, বাবা আমার টাকার গদিতে বসে থাকেন। ইচ্ছে করলে আমাকে সোনার মাদুলি বানিয়ে যে কোন ব্যবসায়ীর গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তাঁর মনের একটাই শখ, আর যাই হোক, ছেলে হতে হবে বিসিএস ক্যাডার। বড় গলা করে যেন বলতে পারেন জামাই তাঁর মস্ত অফিসার। তবে তাঁর পছন্দের এক নম্বর তালিকায় ছিল পুলিশ। মাছের রাজা ইলিশ জামাইর রাজা পুলিশ। সে চেষ্টা যে বাবা একদম করেননি তা নয়। কিন্তু কে নাকি তাঁকে বলেছে পুলিশেরা বৌ মারে। (চলবে….)

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...