ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - আমাদের মঠবাড়িয়া : দুর্ভোগের শহর এবং আমাদের প্রত্যাশা

আমাদের মঠবাড়িয়া : দুর্ভোগের শহর এবং আমাদের প্রত্যাশা

সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে বসবাস বা বেড়ে ওঠা আমাদের প্রত্যেকেরই একটা অন্যতম মৌলিক চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা, একটি সুন্দর পরিবেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে পারে একটি সুন্দর আগামী। আমি বা আমরা যে শহর বা পরিবেশে বসবাস করি সেই পরিবেশ সমাজ বা শহরের কাছ থেকেও ঠিক এমনি একটি মনোরম পরিবেশ আশা করতে পারি। আসলে আজকে যে বিষয়টি নিয়ে একটু বলতে চাই তা হলো মঠবাড়ীয়া শহরের কয়েকটি জনদুর্ভোগ নিয়ে কিছু কথা। যা আমাদের অনেক কে ইতিমধ্যে ব্যাক্তিগত বা সামাজিক বিভিন্ন দিক দিয়ে নাড়া দিয়েছে………!
যাই হোক মূল কথায় আসি, আয়তনে ৩৫৩.২৫ বর্গ কি. মি, জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ, যার ৪৯ শতাংশ পুরুষ ও ৫১ শতাংশ মহিলা। ১১ টি ইউনিয়ন, ৬৯ টি মৌজা, ৯৪ টি গ্রাম ও নয়টি ওয়ার্ড সহ ১ টি পৌরসভা নিয়ে আমাদের এই মঠবাড়ীয়া। বিভিন্ন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাবসা- বানিজ্য, অফিস- আদালত যা কোন কিছুতেই ঘাটতি নেই এই জনপদে। সারা দেশের মধ্যে শিক্ষিতের হার বিবেচনা করলে এই জনপদের জনগোষ্ঠীর ৬১.৭ শতাংশ শিক্ষার হার চোখে পড়ার মতো। যা হয়তো দেশের অনেক জেলা শহরের চেয়ে এগিয়ে। আসলে আমাদের এই জনপদ বা শহর নিয়ে নতুন কিছু লেখার নাই, অনেকেই বিগত বিভিন্ন সময় মঠবাড়িয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি সম্পর্কে লিখে গেছেন, তাই এসব নিয়ে নতুন করে লেখার কিছু নাই…. তবে কিছু কথা আজ বলতেই হচ্ছে, ১১ টি ইউনিয়নের থেকে সমান দূরত্ব নিয়ে কেন্দ্রস্থল হিসেবে অবস্থান মঠবাড়িয়া পৌর শহরের। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, হাসপাতাল, পৌর কার্যালয়, উপজেলা প্রশাসন অফিস, থানা, কোর্ট, মসজিদ, মন্দির ও নানান ধরনের রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই জনপদের প্রতিটি মানুষের নাগালের মধ্যেই।
আসলে আজকের এই লেখাটা কোন ইতিহাস ঐতিহ্য বা ব্যাক্তি কেন্দ্রিক নয়, আমাদের এই ছোট্ট শহরের কিছু জনদুর্ভোগ বা দৈনন্দিন জীবনের চলার পথের কিছু অসম বৈচিত্র নিয়ে, আর ইদানীং মঠবাড়িয়ায় চলাফেরা করতে গিয়ে যে বৈষয়িক বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছি তা নিয়ে, আর এই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে গিয়ে যেটি আসে তা হলো “পারিপার্শ্বিক দূষণ ও শব্দ দূষণ” এ ব্যাপারে প্রথমত বলতে গেলে যে ব্যাপারটি প্রথমে আসে তা হলো মাত্রাতিরিক্ত ধুলা বা অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার জন্য জনদুর্ভোগ, আর দ্বিতীয়টি হলো বিরক্তকর শব্দ দূষণ।
বাংলাদেশের গোটা দক্ষিনাঞ্চলের মধ্যে মঠবাড়িয়া একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ এবং মঠবাড়িয়া পৌর শহরটি হলো বাংলাদেশের অন্যতম একটি ১ম শ্রেনীর পৌর শহরের অন্তর্ভুক্ত, দেশের প্রতিটি “সিটি কর্পোরেশন” বা পৌরসভাধীন নাগরিকের মতো এখানেও রয়েছে জনগনের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা সেই সুবিধার কতোটুকু পাই বা পাচ্ছি….??? নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পৌরসভাধীন প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের দৈনন্দিন বর্জ্য নিষ্কাষনের জন্য ব্যাবস্থা রয়েছে। কিন্তু মঠবাড়িয়া পৌর শহরে বসবাসরত নাগরিক সেই সুবিধা পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে জনগন যেখানে সেখানে দৈনন্দিন বর্জ্য ফেলছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের পারিপার্শিক ভাবমূর্তি। পয় বা বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো মঠবাড়িয়া পৌরসভার জন্যও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকলেও সে ধরনের কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। মঠবাড়ীয়া পৌর শহরে বিশুদ্ধ বা দৈনন্দিন ব্যাবহারের জন্য এখনো পানি সরবরাহের সু-ব্যাবস্থা হয়ে ওঠেনি, তাই জনসাধারণ কে বাধ্য হয়ে প্রাকৃতিক উৎস বলতে পুকুর বা খালের পানির উপর নির্ভর হতে হয়, আর অবাধ বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা ও অবৈধ দখলদারিত্বের কারনে মানুষের পানি পাওয়ার শেষ ভরসা টুকুও হারাতে বসেছে। আর এর থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায় হিসেবে পৌর কর্তৃপক্ষের এবং স্থানীয় প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি ছাড়া কিছুই দেখছি না।। শহর দূষনের দিকে দৃষ্টি দিলে আরও একটি বিষয় যা বর্তমানে “টক অব দ্যা টাউন” তা হলো, পাথরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে বহেরাতলা পর্যন্ত সড়কটি, যা বর্তমানে খুবই বেহাল অবস্থা। বিকল্প বাইপাশ সড়ক না থাকায়, দেশের বিভিন্ন দিক থেকে আসা পাথরঘাটা, বরগুনা, বামনা, সাপলেজা ও বিভিন্নদিক গামী প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনের যাতায়াত এই একটি মাত্র সড়ক দিয়ে, যার অধিকাংশই বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা। ফলে শহরের ব্যাবসায়ী, স্কুল- কলেজ গামী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় নানান জটিল ধুলিকা দূষণের দূর্ভোগ। যাতে করে নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শহরবাসী, সাথে সাথে বাড়ছে দুর্ঘটনাও, আর বিভিন্ন অ-রেজিষ্ট্রিকৃত বাহনের অবাধ চলাফেরাও শহরের বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (পাঠশালার) সামনের সড়কে নানান সময় সৃষ্ট যানজটের কারনে স্কুল গামী কোমলমতি শিক্ষার্থী ও দূর দূরান্ত থেকে আসা স্কুল-কলেজ গামী শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনা নিরসনে অতি দ্রুত এই সড়কটির সংস্কার করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি..!
বর্তমানে মঠবাড়িয়াকে মাইকিং এর শহর বললে হয়তো ভুল হবে না, মাইকিং এর বিড়ম্বনা এতোটাই প্রকট আকার ধারন করছে যে এর থেকে পরিত্রানের বা প্রতিবাদের জন্য না লিখেই পারলাম না, আমরা যারা মঠবাড়ীয়া শহরে বা আশেপাশে বসবাস করি তারা হয়তো খুব ভালোভাবেই এই মাইকিং বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছি, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, ডাঃ চেম্বার, জনসভা, ওয়াজ মাহফিল, স্কুল-কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তির নামে বিকট শব্দে যখন তখন মাইকিং শুনে থাকি, যা বিরক্তিকর বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে অবাধ, বিকট ও বিভ্রান্তিকর আওয়াজের কারনে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যত্রতত্র মাইকিং এর শব্দের কারনে শহরকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ব্যাহত হয়, হাসপাতাল বা ক্লিনিকের চিকিৎসাধীন রোগীর সমস্যা হচ্ছে, আর মাইকিং বিড়ম্বনা এমন মহামারি আকার ধারন করেছে যে শুনলে মনে হয় এরা প্রতিযোগিতায় নেমেছে…!!! এইসব বিষয়ের জন্য মাইকিং করা প্রয়োজন তবে, একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করা যেতে পারে যেমনঃ স্কুল- কলেজের পাঠদানের সময় ব্যাতি রেখে, দিবা কালীন শহর কেন্দ্রিক যেকোন বিষয়ে মাইকিং এর ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন করা যেতে পারে, যা কেবল প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া হয়তো সম্ভব নয়..! আর এ ব্যাপারে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিলে হয়তো শহর বা শহরের আশেপাশে বসবাসরত জনসাধারন এর স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হবে না আর পরীক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হবে, কারন মেধার সুস্থ মনন ও বিকাশে সাহায্য করবে।
তাই আসুন, আপনি আমি আমারা সবাই মিলে আমাদের মঠবাড়ীয়াকে আধুনিক, সমৃদ্ধ, রুচিশীল, সচেতন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গ্রহণযোগ্য নাগরিক সমাজ হিসেবে গড়ে তুলি।
*সবার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি*
লেখক >>মোঃ তরিকুল ইসলাম রুবেল। এল,এল,বি (অনার্স) এল,এল,এম সবুজনগর, মঠবাড়িয়া।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...