দেবদাস মজুমদার >>

বেদনা এমন একটি ফল যা বাজারে সারা বছর জুড়ে চড়া দামে কিনতে হয়। আমাদের উপকূলে এর বাণিজ্যিক আবাদ না থাকলেও সারা বিশ্ব জুড়ে এ ফলের বাজার রয়েছে। বেদনাকে আনারও বলা হয়ে থাকে। বেদানা রসালো মিষ্টি মধূরসের ফল।। এই ফলের দানায় দানায় রয়েছে খাদ্যগুণে ভরা প্রাণ রস। যা মানব দেহের নানা রোগের মহৌষধ।

গবেষণা বলেছে, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর বেদানা। রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি আর ভিটামিন কে। পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ বেদানা। ফাইবার আর প্রোটিনের উৎসও এই ফল। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ বেদানা ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত বেদানা ক্যানসারাস কোষগুলির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে দারুন ভাবে কাজে দেয় বেদানা। ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ন্ত্রণেও বেদানার রস অতি উপকারী।

বেদানার রস হার্টের অসুখ অনেকটাই কমিয়ে দেয়। অ্যান্টিঅক্সিডান্টে ভরপুর বেদানার রস ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রক্তচাপ কমাতেও দারুন ভাবে কাজে দেয় বেদানা। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে বেদানার রস। অ্যালঝাইমার্সের ক্ষেত্রে কাজে দেয় এই ফল। ব্যথা কমাতেও বেদানার জুড়ি নেই। গাঁটের ব্যথা থেকে বাতের যন্ত্রণা কমাতে পারে বেদানাই। ব্যাকটিরিয়া আর ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। ত্বক উজ্জ্বল করতেও বেদানা দারুন কাজে দেয়।

বেদানা, আনার বা ডালিম এক রকমের ফল । এর ইংরেজি নাম pomegranate। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। কুর্দি ভাষায় ‘হিনার’ এবং আজারবাইজানি ভাষায় একে ‘নার’ বলা হয়। সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় ‘দারিম’। বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলি খাওয়া হয় । এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।

বেদানা সকলেই প্রিয় ফল। তৃষ্ণায় ক্লান্তি মেটাতে এক গ্লাস বেদানার জুস সবারই পছন্দ। সেই সাথে বেদানার রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুণাবলি।

ডাইরিয়ার সমস্যায় বেদানা খুবই উপকারী। দিনে দুই তিন বার বেদানার জুস খেতে পারলে এ সমস্যা থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়। শীতের সময় জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি থেকে বাঁচার জন্য বেদানার জুস খেতে পারেন।অজীর্ণ রোগের উপশমে বেদানার রস উপকারী।বমিভাব দূর করতে হলে মধু ও বেদানার রস সম পরিমাণে মিশিয়ে পান করুন।বেদানায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যার ফলে আপনার শরীরের কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। হার্টে অক্সিজেন সরবরাহে ও রক্ত চলাচল ভালো রাখতে বেদানার রস উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, তিন মাস প্রতিদিন এক কাপ করে বেদানার রস খেলে হার্টের মাসলে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-সি, সাইট্রিক অ্যাসিড ট্যানিন-সমৃদ্ধ বেদানা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রোস্ট্রেট ক্যান্সার ও স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধে বেদানার রস উপকারী। গর্ভবতী নারীরা চিকিত্সকের পরামর্শ নিয়ে বেদানা খেতে পারেন। এতে শরীরে রক্ত-সঞ্চালন বাড়ে এবং শিশুর ব্রেইনে কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। গলাব্যথা কমাতেও বেদানার জুস খেতে পারেন।এক কাপ বেদানার জুসে এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া ও অল্প মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে শরীর চাঙা থাকে। একটা বেদানায় রয়েছে ১০৫ গ্রাম ক্যালরি, ১২৪ গ্রাম পানি, ১.৪৬ গ্রাম প্রোটিন, ৩৯৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৯.৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।

তথ্যসূত্র >> মুক্ত বিশ্বকোষ