ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা : সত্যি না মিথ্যে ?

হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা : সত্যি না মিথ্যে ?

ছোটবেলায় হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার গল্প শুনে বা পড়ে আসেনি এমন কাউকে নিশ্চিতভাবেই পাওয়া যাবে না। তবে কোনো এক কারণে নামটা অনেক জায়গাতেই ছিল ‘হ্যামিলন’, অথচ নামটা হবে ‘হ্যামেলিন’। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই গল্প নিয়ে হঠাৎ মেতে উঠলাম কেন ? কারণ এটি নিছক গল্পই না, এর পেছনেও রয়েছে কিছু কথা; এমন কি হতে পারে না যে, হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার ঘটনা আসলে অতিরঞ্জিত হলেও সত্য ? আসুন বিস্তারিত জেনে নেই। ছোটবেলায় যে গল্পটা জেনেছিলেন, সেটা আরেকবার সংক্ষেপে বলবো, তবে কাহিনীর ভাঁজে ভাঁজে যে বিবরণ গুলো রয়েছে সেদিকে নজর দেব। জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনির হ্যামেলিন শহর। সালটা ছিল ঠিক ১২৮৪। হ্যামেলিন শহর তখন ইঁদুরের প্রকোপের স্বীকার। হঠাৎ একদিন কোথা থেকে যেন এসে হাজির এক বাঁশিওয়ালা (পাইপার/Piper) , তার গায়ে ছিল হরেক রঙের পোশাক। (পাইড/Pied= হরেক রঙা) সে এক উপায় বাতলে দিল হ্যামেলিনের মেয়রের কাছে। মেয়র Mauldin বললেন, ঠিক আছে , ইঁদুর তাড়িয়ে দাও , তাহলে তোমাকে আমি ১০০০ সোনার মুদ্রা দেব। বাঁশিওয়ালা রাজি হয়ে গেল , তার বাঁশি বাজালো আর সুড় সুড় করে সবগুলো ইঁদুর পেছন পেছন এসে তলিয়ে গেল শহরের পাশের Weser নদীর জলে। তবে একটা ইঁদুর বেঁচে গেল কীভাবে যেন! বাঁশিওয়ালা ফিরে এলো, তার প্রাপ্য চাইলো। কিন্তু মেয়র তাকে ১০০০ সোনার মুদ্রা দিতে চাইলেন না, দিলেন মাত্র ৫০! সাথে আরো বলে বসলেন, বাঁশিওয়ালা নিজেই এই ইঁদুরগুলো এনেছিল যেন তাড়িয়ে টাকা আয় করতে পারে! বাঁশিওয়ালা রেগে চলে গেল , যাবার আগে বলে গেল প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়বে।
১২৮৪ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখ শহরে ফিস্ট চলছিল, রোমে জন এবং পলের শহীদ হবার স্মরণে সেন্ট জন-পল দিবস পালন করা হয়। এটিই চলছিল সেদিন, সবাই ছিল চার্চে, যখন বাঁশিওয়ালা ফিরে এলো, তবে এবার মোটেও রঙ বেরঙের পোশাকে নয়, একরঙা সবুজ পোশাকে। (সবুজ মানে ছিল শিকারি) তখন বাজে সকাল সাতটা। সে বাজানো শুরু করল তার মায়াবী বাঁশি। শহরের সব চার বছরের বড় শিশু বেরিয়ে এলো, গুণে গুণে ১৩০ জন শিশু ( মেয়রের মেয়েও ছিল সেখানে )! বাঁশিওয়ালার বাঁশির সুরে শিশুগুলো সম্মোহিত হয়ে এক পাহাড়ের ওপাশের গুহায় ঢুকে গেল, আর কোনদিন বেরিয়ে এলো না। [ তাদের নাকি নিয়ে যাওয়া হয় ট্রান্সিল্ভানিয়াতে ] তিন জন শিশু বেঁচে গিয়েছিল। একজন কানে শুনতে পেত না, তাই সুর শোনেনি। আর অন্যজন অন্ধ হয়ে জন্মাবার কারণে দেখতে পায়নি কোথায় যেতে হবে। আরেকজন জ্যাকেট ফেলে গিয়েছিল বলে আবার ফেরত আসে, জ্যাকেট নিয়ে আবার গিয়ে দেখে সবাই চলে গেছে। এই তিন শিশুর মাধ্যমেই চার্চফেরত প্রাপ্তবয়স্করা পরে জানতে পারল কী হয়েছে। আরেকটি বেবিসিটার মেয়ে কোলে শিশু নিয়ে পেছন পেছন গিয়েছিল অনেকদূর দেখতে, সে সবার আগে ফেরত এসে কাহিনী বলেছিল। ঘটনার আরেক ভার্সনে বলা হয় শিশুদের নিয়ে বাঁশিওয়ালা চলে যায় কোপেলবার্গ পাহাড়ের ওপারে। হয়ত আপনি ভাবছেন, এ তো নিছক এক গল্প! কিন্তু না, ১২৮৪ সালের ঘটনার পরেই চার্চে Stained-glass জানালা লাগানো হয় ১৩০০ সালের দিকে। সেখানে এই করুণ ঘটনা লেখা ছিল। জানালাটা বানাবার উদ্দেশ্যই ছিল শিশুদের স্মরণ করা। জানালাটা ধ্বংস হয়ে যায় ১৬৬০ সালে, পরে ইতিহাসবিদ হ্যান্স ডবারটিন ঐতিহাসিক লিখনি থেকে এই জানালা পুনঃনির্মাণ করেন। সেখানে দেখা যায় বাঁশিওয়ালা আর সাদা পোশাকে শিশুদের ছবি। আমরা যেরকম ‘খ্রিস্টাব্দ’ বলি, যার মাধ্যমে খ্রিস্টের জন্ম স্মরণ করা হয়, তেমনই হ্যামেলিন শহরের সরকারি ঐতিহাসিক রেকর্ড শুরুই হয় এই ঘটনার রেফারেন্সে। প্রথম যে এন্ট্রি লিপিবদ্ধ আছে, সেটি হলো ১৩৮৪ সালের, সেখানে লিখা- “১০০ বছর হতে চলেছে আমাদের শিশুদের হারিয়েছি।” ১৫৫৯ সালের বিস্তারিত বিবরণ থেকে ইঁদুরের ঘটনা পাওয়া যায়। তার আগ পর্যন্ত শিশুদের হারাবার করুণ ঘটনা প্রাধান্য পাওয়ায় আগের ইঁদুরের ঘটনা প্রাধান্য পেত না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, যদিও এই ঐতিহাসিক লেখনি সংরক্ষিত আছে, তারপরেও এই অদ্ভুত ঘটনার বাস্তবিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় অনেকেই অস্বীকার করে বসেন যে আদৌ এ ঘটনা ঘটেছিল। এখন পর্যন্ত কেউই এর নিশ্চিত ব্যাখ্যা দিতে পারে নি। কেউ বলেছেন, পাইড পাইপার আসলে এক শিশুকামী ছিল , তবে কীভাবে এতজনকে নিয়ে গেল তার ব্যাখ্যা নেই। কারো মতে, ব্ল্যাক ডেথ মহামারিতে সব শিশু মারা যাওয়াতে গ্রামবাসী এই কাহিনী বানিয়েছে। কেউ বলেছে, এই শিশুদের ক্রুসেডে পাঠানো হয়েছিল, গ্রামবাসী যখন দেখল শিশুরা আর ফেরে নি, তখন এই ধাপ্পাবাজি গল্প ফেঁদে বসল নিজেদের বুঝ দিতে । [ সেই ক্রুসেড ১২১২ সালে হয়েছিল বলে এই থিওরি বাদ দিতে হয় , অনেক আগের ঘটনা যে! ] ১৩৮৪ সালে হ্যামেলিনের ডেকান লুডের কাছে থাকা বইতে লাতিনে লিখা বাক্যে তার দাদীর ভাষ্যে নিজের চোখে দেখা হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালার ঘটনা লিখিত ছিল। সতের শতকে এসে বইটি হারিয়ে যায়। ১৪৪০ সালের Lüneburg পাণ্ডুলিপিতে জার্মান ভাষায় লিখা আছে, হ্যামেলিনের এক বাড়ির দেয়ালে খোদাই করে লিখা এই অনুচ্ছেদ- ANNO 1284 AM DAGE JOHANNIS ET PAULI WAR DER 26. JUNIDORCH EINEN PIPER MIT ALLERLEY FARVE BEKLEDET GEWESEN CXXX KINDER VERLEDET BINNEN HAMELN GEBORENTO CALVARIE BI DEN KOPPEN VERLOREN
অর্থ : “ ১২৮৪ সালের ২৬ জুন, সেন্ট জন পল দিবসে হ্যামেলিনে জন্ম নেয়া ১৩০ জন শিশু এক হরেক রঙা বংশীবাদকের সম্মোহনে পেছন পেছন হারিয়ে যায় কোপেনের পেছনের কাল্ভারিতে। ” কোপেন হ্যামেলিনকে ঘিরে থাকা পাহাড়। ১৫৫৬ সালে বলা হয়, বংশীবাদক আসলে ছিল স্বয়ং শয়তান। কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে এসে কেউ কেউ বলেছেন বাঁশিওয়ালা আসলে ছিল এক এলিয়েন, কোপেন পাহাড়ের আড়ালে রাখা মহাকাশযানে করে শিশুদের নিয়ে গিয়েছিল নিজের গ্রহে, কারণ সেখানে জনসংখ্যা বাড়ানো দরকার ছিল। নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির সুর বাজিয়ে কখনো ইঁদুর কখনো শিশু আকর্ষণ করতে পারত তার যন্ত্র দিয়ে। বর্তমানের হ্যামেলিন শহরে যদি কখনো বেড়াতে যান তবে দেখবেন সেখানে বাঁশিওয়ালার মূর্তি, সাথে ইঁদুর।
শিশুদের প্রস্থানের করুণ ঘটনার ৭২৫তম বার্ষিকীতে ২০০৯ সালে তারা এক টুরিস্ট ফেস্ট আয়োজন করে। যে বাড়িতে খোদাই করা ছিল ইতিহাসটি, সেটিকে এখন “র‍্যাট ক্যাচার” এর বাড়ি বলে। প্রতি বছর
লেখক >> ডক্টর মোহাম্মদ জহিরুল হুদা জালাল, উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...