আজকের মঠবাড়িয়া সত্য প্রচারে সোচ্চার 
খালিদ আবু,পিরোজপুর >>
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় ৭ বছরের শিশুর নাম মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় এবং একই ব্যাক্তি ১৭ বছরে স্কুল শিক্ষক হওয়া নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়েছে। ৭১’ সালে ৭ বছরের শিশু কিভাবে অস্ত্রের প্রশিক্ষন নিল এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করল তা নিয়ে রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল। শুধু তাই নয় ৭ বছর বয়সের এ শিশু বর্তমানে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তিনি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করা সহ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতাও তুলছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স নূন্যতম ১৩ বছর থাকার কথা থাকলেও পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের মৃত: ছৈয়দ আলী সেপাইর ছেলে মোঃ আবু হানিফ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দীর্ঘ বছর ধরে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন। এলাকায় হানিফ সেপাই নামে তিনি পরিচিত। বর্তমানে তিনি উপজেলার উত্তর বালিপাড়া রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (নব জাতীয়করন) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তার স্কুল কোড নং-৯৯৫০২০৭৯০০১। এসএসসির সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৬৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী। বাগেরহাট জেলার শরনখোলা উপজেলার জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮১ সালে মানবিক শাখায় তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন। যার রোল নং- রায়েন্দা ৫৩৫, সনদ নং-০৬৪৪৮, নিবন্ধন নং-৪২৪৯১/১৯৭৭-৭৮। এই সনদ দিয়েই তিনি ১৯৮১ সালের ১ জুলাই সহকারী শিক্ষক পদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। জন্ম তারিখ অনুযায়ী চাকরিতে যোগদানের সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ৪ মাস ২৫ দিন। এছাড়া ২০০৮ সালে উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় থেকে তিনি পরীক্ষা দিয়ে ১.৭৫ পেয়ে এইচ এসসি পাশ করেন। শুধু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিই নয় ১৮ বছর পূর্ন হওয়ার আগে কিভাবে তিনি চাকরিতে প্রবেশ করলেন তা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে। তার জাতীয় পরিচয় পত্র এবং এসএসসি সনদে বয়স একই। তার এনআইডি নাম্বার ৭৯১৯০১৫৭০৫৭২১। 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষায়ক মন্ত্রনালয় মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রমানের জন্য বিগত কয়েক বছর পূর্বে একাডেমিক সনদ (এএসসি পাশের) চাইলে আবু হানিফ নিজের প্রকৃত বয়স আড়াল করে এসএসসি সনদ না দিয়ে তিনি জালিয়াতি করে অস্টম শ্রেনীর সনদ জমা দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে। আর ঐ অস্টম শ্রেনীর সনদে তিনি ১৩ বছর বয়স পূর্ন করে জমা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদ আনেন মন্ত্রনালয় থেকে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আবু হানিফের মুক্তিযোদ্ধা আইডি নং- ০১০৬০৫০০৬৪, গেজেট নং-২৪৬৮ এবং মুক্তিবার্তা নং-০৬০৫০৩০০২৪। যদি তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা অস্টম শ্রেণি পাশ হয় তাহলে তিনি কি করে এই সনদে সহকারি শিক্ষক পদে চাকরি নিলেন এমন প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন শিক্ষক।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যাদের বয়স নূন্যতম ১৩ বছর তাদের ২০১৭ সালে অবসর গ্রহনের কথা। আবু হানিফ সাধারন চাকরিজীবীদের চাইতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাড়তি আরো ১ বছর সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পেতে পারেন। সে হিসেবেও তার ২০১৮ সালে অবসর গ্রহনের কথা। কিন্তু এখনও তার অবসর গ্রহনের সময় রয়েছে সাধারন কোটায় ৬বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বাড়তি ১ বছর মিলিয়ে মোট ৭ বছর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আবু হানিফের ব্যাপারে উত্তর বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আবু হানিফ শিশু ছিলেন। শিশু বয়সে কিভাবে তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করলেন তা বোধগম্য নয়। তাছাড়া বহু বছর পূর্বে দুটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয় তার কাছ থেকে। এলাকায় তিনি প্রভাবশালী বিধায় স্থানীয়রা প্রকাশ্যে তার ব্যাপারে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবু হানিফের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেস্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার অভিযুক্ত শিক্ষক আবু হানিফের ব্যাপারে বলেন, আমি এই শিক্ষকের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে কাগজ পত্র যাচাই করে দেখব।
ইন্দুরকানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বেলায়েত হোসেন বলেন, এ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আবু হানিফের নাম রয়েছে। তবে তার জন্ম তারিখে বয়সের কোন হেরফের থেকে থাকলে সেটা আমার জানা নেই।
পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সমীর কুমার বাচ্চু বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় মুক্তিযোদ্ধার বয়স নির্ধারন করে দিয়েছেন নূন্যতম ১৩ বছর। ১৩ বছরের কম বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এর কম যদি কারো বয়স হয় কিংবা কেউ যদি জালিয়াতি করে বয়স বাড়ায় সেটা প্রমান হলে তালিকা থেকে তিনি বাদ পড়বেন।
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুরুল হুদা এ ব্যাপারে বলেন, কোন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এরকম কোন তথ্য গোপনের অভিযোগ পেলে কাগজ পত্রের সত্যতা যাচাই করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
