ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - ঐতিহাসিক ২৩ মার্চ

ঐতিহাসিক ২৩ মার্চ

মো. রাসেল সবুজ >>
আজ ঐতিহাসিক ২৩ মার্চ। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান রাষ্ট্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়ার দিন। একাত্তরের আজকের এইদিনে পূর্ব বাংলার কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কবর ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান অনিবার্য করে তোলে।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ স্বাধীন কেন্দ্রীয় বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চের লাহোর প্রস্তাবের স্মরণে পাকিস্তানের জাতীয় দিবস ‘পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবস’ প্রত্যাখ্যান করে পূর্ব বাংলায় জাতীয়ভাবে ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনী’ এদিন পল্টন ময়দানে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে পূর্ণ সামরিক কায়দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। হাসানুল হক ইনু পিস্তল দিয়ে ফায়ার করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং কামরুল আলম খান খসরু রাইফেল উচিয়ে গান স্যালুট প্রদান করেন। এ সময় মাইকে বেজে ওঠে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’। ‘জয় বাংলা বাহিনী’র নারী ও পুরুষ কন্টিজেন্টের সদস্যরা রাইফেল নিয়ে মার্চ পাষ্ট করে পতাকার প্রতি সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান।স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ মার্চপাষ্টে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর ‘জয় বাংলা বাহিনী’ রাজপথে সামরিক কায়দায় মার্চ পাষ্ট করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেয়। বঙ্গবন্ধু পতাকাটি নিজ বাসভবনে উত্তোলন করেন। এদিন কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট, প্রেসিডেন্ট হাউস, মার্কিন কনস্যূলেট ছাড়া ঢাকায় হাইকোর্ট, সচিবালয়, বিচারপতিদের বাসভবন, বিদেশী কূটনৈতিক মিশনসহ সরকারি-বেসরকারি সকল ভবন ও স্থাপনার শীর্ষে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তৈরি ও বিতরণ করা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। একইভাবে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পূর্ব বাংলার সকল জেলা, মহকুমা, থানায় সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এদিন ঢাকা টেলিভিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় যাতে করে টেলিভিশনে পাকিস্তানের পতাকা প্রদর্শন করতে না হয়। রেডিওতে বার বার জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাজানো হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার নিষ্পত্তির যে খেলা শুরু করেছিল ১৫ তারিখ ঢাকায় আসার পর, ভুট্টো এসেছিল ২১ তারিখে, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামী জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
বঙ্গবন্ধুর বাসভবন অভিমুখে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল ক্রমেই বেড়ে উঠছিল। ২২-২৩ মার্চ তারিখে উত্তাল জনতার ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকলো, স্বাধীনতা ঘোষণার দাবীতে এবং সশস্ত্র সংগ্রামের আকাঙ্খায়। ২৫শে মার্চ কালো রাতে, ইয়াহিয়া তার খেলা শেষ করল হিংস্র গনহত্যার মাধ্যমে। তবে তার আগেই বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে, স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে, জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে, ৩ মার্চ ঘোষিত ইস্তাহার এর ভিত্তিতে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়েছিল, পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছিল ২৩ মার্চ। এসবের পেছনে ছিল নিউক্লিয়াস , যা পরে পরিণত হয়েছিলো সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ এর নেতৃত্বাধীন BLF এ। শ্রদ্ধার সংগে স্মরণ করি বিএল এফ ও নিউক্লিয়াস এর সকল নেতৃবৃন্দকে- তাঁদের অবদানের জন্য।।
শহরের সব মিছিল গিয়ে শেষ হয় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। এই দিন বঙ্গবন্ধু বারবার মিছিলকারীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভাষন দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষনা করেন ৭ কোটি মানুষের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতা শেষে নিজে শ্লোগান ধরেন “ জয় বাংলা” আমার দেশ তোমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ, জাগো জাগো বাঙ্গালি জাগো, সংগ্রাম সংগ্রাম চলছে চলবে”

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...