ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা

মানুষের অবসর দিন দিন বাড়ছে আর হাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে টাকা, যা খরচ করার জন্য পর্যটনকেই মানুষ বেছে নিচ্ছে। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিপুলসংখ্যক পর্যটকের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোয়। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের মধ্যে এ শিল্পে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০ দশমিক ৫ ভাগ। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজার ধরতে পারে, তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

নেপালের লুম্বিনি গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। শুধু জন্মগ্রহণই নয়, বুদ্ধত্ব লাভের পরও সিদ্ধার্থ বুদ্ধ লুম্বিনির বনে এসেছিলেন। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো লুম্বিনিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করে। এখানে বর্তমানে রয়েছে বেশ কিছু মন্দির, মঠ ও অশোকস্মারক স্তম্ভ। প্রতিদিন এখানে আসেন হাজারো পর্যটক। লুম্বিনিতে পর্যটক আসবে খুব স্বাভাবিক। কিন্তু চিতওয়ান ফরেস্ট-এ বিদেশি পর্যটক সংখ্যার পরিসংখ্যান দেখে একটু বিস্মিতই হতে হলো। একটা খুব সাধারণ নদী, নাম তার নারায়নী, পাশে খুব সাধারণ একটি বন। নদীতে সেভাবে স্রৌত নেই, নদীর পানিও খুব স্বচ্ছ নয়। অথচ এর তীরে শত শত রেস্টুরেন্ট, হোটেলসহ পর্যটন স্থাপনা এবং নানা ধরনের আনন্দ আয়োজন। ভূমিকম্প পরবর্তী নেপাল যে আবার জেগে উঠছে তা দেখা গেলো এবার বাংলাদেশের পর্যটন খাতে জড়িতদের ফ্যামিলিয়ারাইজেশন বা ফ্যাম সফরের মাধ্যমে। যারা পর্যটন খাতে বাণিজ্য করেন তারাও অবাক হয়েছেন যে, এটিও হতে পারে একটি প্রোডাক্ট (দর্শনীয় স্থান)। বাস্তবতা হলো তারা সেটি করতে পেরেছে, আমাদের দেশে এর চেয়ে অনেক সুন্দর নদী আছে, নদীর তীর আছে, আছে প্রকৃতি, কিন্তু আমরা সেগুলোকে প্রোডাক্ট হিসেবে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে পারিনি।

২০১৬ সালে ঘোষিত পর্যটন বর্ষ এর কার্যক্রম বর্ধিত থাকবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এই তিন বছরে মোট ১০ লক্ষ বিদেশি পর্যটকের বাংলাদেশে ভ্রমণকে লক্ষ্য ধরে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, সাথে তিন লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান এর সুযোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুধু পর্যটক বাড়ানো নয়, বাংলাদেশকে অন্যতম সেরা পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বিশ্বে অবস্থান তৈরি করতে চায় সরকার। কিন্তু তার জন্য ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা কোথায়? এখনো সম্পৃক্ত হয়নি পর্যটন শিল্পের প্রধান চার স্টেকহোল্ডার ট্রান্সপোর্ট, হোটেল-মোটেল, খাদ্য ও পানীয় এবং ইভেন্ট তথা বিনোদন খাত। ঠিকমতো যুক্ত করা হয়নি বেসরকারি খাত ও গণমাধ্যমকে। ২০১৮ সালে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক দেশে আনার লক্ষ্য নেয়া হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে কি পরিমাণ পর্যটক আসছে তার কোনো পরিসংখ্যান তুলে ধরেনি পর্যটন মন্ত্রণালয় ও খোদ বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন দাতা দেশ থেকে ৩ হাজার কোটি বা ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ পেয়েছে যার মধ্যে ১৫ হাজার কোটি ডলার খরচ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রধান দাতার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সৌদি আরব ও পশ্চিম ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার এখনও অনেক বেশি। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে এবং ভারত ও চীনের পর বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ সংখ্যক দরিদ্র মানুষ বসবাস করে। একই আয়ের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সামাজিক সেবার মান অনেক কম। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবেই বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে এবং এর অর্থনীতি বর্তমানে রেমিটেন্সের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সবচেয়ে কম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণে এই মজুদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সালে এই মজুদের মূল্যমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি বা ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের ৪০তম বৃহত্তম মজুদ।

লেখক : সিফাত আহমেদ, এসিসিএ (পার্ট কোয়ালিফাইড)

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...