ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - শ্রেণী কক্ষ নেই তাবু টানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান !

শ্রেণী কক্ষ নেই তাবু টানিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান !

 

দেবদাস মজুমদার >>

স্কুল ভবন জরাজ্বীর্ণ হয়ে গত পাঁচ বছর ধরে পরিত্যাক্ত। শ্রেণী কক্ষের অভাবে গত পাঁচ বছর ধরে পাশ্ববর্তী একটি মাধ্যমিক স্কুলের তিনটি শ্রেণী কক্ষ ধার নিয়ে সেখানে চলছিল কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয অনিবার্য কারনে মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ আর প্রাথমিক স্কুলকে শ্রেণী কক্ষ ধার দিতে অপারগ। মাধ্যমিক স্কুলে কারিগরী শাখা চালু হওয়ায় ওই তিনটি শ্রেণী কক্ষ এখন নিজেদেরই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এজন্য তারা প্রথমিক বিদ্যালয় কর্তপক্ষকে পত্র দিয়ে শ্রেণী কক্ষ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছে। ফলে ৩৫৬জন শিক্ষার্থীর পাঠদান নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বাধ্য হয়ে পরিত্যাক্ত স্কুল ভবনের সামনে খোলা স্থানে তাঁবু টানিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। একদিকে রোদের তাপ আর অন্যদিকে ধূলা বালির দাপটে কোমলমতি শিশুরা চরম কষ্টে লেখা পড়া করছে। প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেও স্কুল ভবন ছাড়াই ৩৫৬শিক্ষার্থীর পাঠদান চলে আসছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে ।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার টিকিকটা ইউনিয়নের ১৩৮ নম্বর কুমিরমারা বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শ্রেণী কক্ষের অভাবে গতকাল শনিবার থেকে পরিত্যাক্ত স্কুল ভবনের সামনে খোলা মাঠে তাবু টানিয়ে পাঠদান শুরু করেছে।
শনিবার দুপুরে মঠবাড়িয়ার টিকিকটা ইউনিয়নের কুমিরমারা বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বিদ্যালয়ের চারজন নারী শিক্ষক খোলা স্থানে তাঁবুর নীচে দাড়িয়ে শিশুদের পাঠদান করছেন। কিছু শিক্ষার্থী ভাঙাচোরা বেঞ্চে আর কিছু শিক্ষার্থী মাটিতে পলিথিন বিছিয়ে লেখা পড়া করছে। এসময় রোদের তাপ আর ধূলা বালিতে শিশুরা অতিষ্ট হয়ে ওঠে।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র তরিকুল ইসলাম জিমেল বলে, আমাগো স্কুল নাই । পরের স্কুলে পড়তেছিলাম। অহন তাবুর নিচে পড়তেছি। বাইরে রৌদের তাপ আর ধূলায় চোখ জলে। আমাগো স্কুল নাই। আমাগো স্কুল ঘর কবে পামু ?

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, স্কুল ভবনটি জ্বরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় গত পাঁচ বছর বছর ধরে পরিত্যাক্ত । তাই ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে পাঠদান সম্ভব হচ্ছিলনা। পাশ্ববর্তী একটি মাধ্যমিক স্কুলের টিন শেডের একটি কক্ষ ধার নেওয়া হয়। সেখানে গাদাগাদি করে চলছিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ৫টি শ্রেণীর পাঠদান। কিন্তু গত এক মাস আগে মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে তাদের টিনশেড ভবনের শ্রেণী কক্ষ ছেড়ে দিতে বলে। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে বাধ্য হয়ে গতকাল শনিবার পরিত্যাক্ত স্কুল ভবনের সামনে খোলা স্থানে তাবুর নিচে পাঠদান শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।
স্থানীয় সমাজসেবক রফিকুল ইসলাম রিপন মাতুব্বর বলেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রাইমারী স্কুলটির এখন আর কোন শ্রেণী কক্ষ নেই। এভাবে এতগুলো কোমলমতি শিশুর লেখা পড়া কিভাবে চলে ! পাঁচ বছর মাধ্যমিক স্কুলেল ধার করা শ্রেণীকক্ষে চলার পর এখন তাবু টানিয়ে চলছে পাঠদান। সকাল নয়টার পড়ই রোদের তাপে শিশুরা অতিষ্ট হয়ে ওঠে। সেই সাথে ধূলা বালি । জরুরী ভিত্তিতে এখানে নতুন স্কুল ভবন দরকার।

বিদ্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ১৯৭২ সালে স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী মিলে কুমিরমারা বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে স্কুলটি রেজিষ্ট্রেশনভূক্ত হলে ১৯৯৪ সালে ৪ কক্ষের একটি পাকা স্কুল ভন নির্মাণ করে শিক্ষা ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ। এরপর দীর্ঘদিনেও আর সে স্কুল ভবনটি সংস্কার হয়নি। স্কুল ভবনটির পলেস্তরা থসে রড বেড়িয়ে গেছে। পিলার ও দেওয়ালজুড়ে ফাটল দেখা দেওয়ায় সেখানে পাঠদান অতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১২ সালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্কুল ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে। এরপর সেখানে পাঠদান আর সম্ভব হয়না। এমন সংকটে পাশ্ববর্তী আবু জাফর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্কুলের পুরাতন একটি টিনশেড কক্ষ প্রাথমিক স্কুলের পাঠানের জন্য সহায়তা দেয়। সেই থেকে ধার করা এক কক্ষেই চলে আসছিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির লেখা পড়া। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি তাদের ধার দেওয়া শ্রেণী কক্ষ ছেড়ে দিতে নোটিশ দিলে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বিপাকে পড়ে। এছাড়া বিদ্যালয়টির আসবাব পত্র ভাঙাচোরা। গত আট বছর ধরে বিদ্যালযটি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরও পদ শূণ্য। চার জন নারী শিক্ষক দিয়ে শত দুর্ভোগের মধ্যে চলছে ৩৫৬ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন স্কুল ভবন বিহীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুর্ভোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পরিত্যাক্ত স্কুল ভবনেই রোজ আমরা জাতীয় পতাকা ওড়াই। তবে পাশ্ববর্তী মাধ্যমিক স্কুলের ধার দেওয়া একটি কক্ষে পাঁচ শ্রেণীর পাঠদান চলে আসছিল। ওই মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কক্ষ ছেড়ে দিতে লিখিত অনুরোধ করেছেন। ফলে শ্রেণী কক্ষ না থাকায় শিশুদের পাঠদান অব্যহত রাখতে তাবুর নিচে ক্লাস চলছে। পাশাপাশি স্কুল কর্তপক্ষকে বিকল্প শ্রেণী কক্ষের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরও জানান বিদ্যালয়ের আসবাপত্র এতটাই জরাজ্বীর্ণ যে তা শিশুদের ব্যবহারও অনুপযোগি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান রিয়াজ মাতুববর বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত পাঁচ বছর ধরেই বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে । স্কুল ভবন পরিত্যাক্ত। মাধ্যমিক স্কুলের ধার করা কক্ষে কোন মতে পাঠদান চলছিল। ধার করা কক্ষও ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন তাবুর নিচে পাঠদান চলছে। এভাবে কোমলমতি শিশুদের খোলা স্থানে পাঠদান সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি বিকল্প শ্রেণী কক্ষ তৈরীর। বিদ্যালয়টির নতুন ভবন নির্মাণ ছাড়া এ সংকট কাটবে না। তাই স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আবেদন জানিয়েছি। এখনও সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন স্কুলটির দুরাবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্কুলটির লেখা পড়া খুব সন্তোষজনক। পুরানো স্কুল ভবনটি পরিত্যাক্ত । পাশ্বর্তী একটি মাধ্যমিক স্কুলের ধার দেওয়া এক কক্ষে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এখন তাবুর নিচে শিশুদের পাঠদানর সম্ভব না। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিকল্প শ্রেণী কক্ষ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টির নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কয়েকদফা অবহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আশরাফুর রহমান স্কুলের ভবন সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সেখানে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে । তবে তা এখনও অনুমোদন মেলেনি। অনুমোদন পেলেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...