ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - রহমত ও বরকতের দাখিল পাশ

রহমত ও বরকতের দাখিল পাশ

সাইফুল বাতেন টিটো >
ছোট বেলায় আমরা নানা বাড়ী যাওয়া আসা করতাম নৌকায়। তো একদিন নানা বাড়ী থেকে ফিরছি আমরা। আমাদের সাথে রয়েছে এক মামা। এক সময় জানতে পারলাম মামা আমাদের বাড়ীতে যাবে না, যাবে আমাদের বাড়ীর কাছের এক মাদ্রাসার হোস্টেলে। ঐ মাদ্রাসা থেকে কয়েকদিন পরেই নাকি মামা দাখিল পরীক্ষা দিবে। আমার কাছে বিষটি খটকা লাগলো। তখন আমি ছোট ঠিকই কিন্তু মাদ্রাসা স্কুলের তফাত বুঝতাম। যতদুর জানতাম মামা এতদিন স্কুলে পড়াশুনা করেছে। ৬/৭ বার পরীক্ষা দিয়েও সে কোন ভাবেই এসএসসি পাস করতে পারেনি। কিন্তু সে হঠাৎ করে মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিবে কি করে? মাদ্রাসায় তো অনেক আরবি থাকে বা অন্যান্য বই থাকে যা আমার কাছে বরাবরই অনেক অনেক কঠিন লাগতো। তখন আমি বরং মাদ্রাসার ছাত্রদের আলাদা করে সমীহ করতাম এই কারনে যে তারা কত্ত কঠিন বিষয় পড়ে পাশ করে! তো মামা কি করে হঠাৎ করে পারবে? আমি মায়ের কাছে জানতে চাওয়ায় মা চাপা স্বরে বললেন মামা নাকি আল্লাহর বিশেষ রহমতে পাশ করে যাবেন। আমিও ভাবলাম হয়তো তাই। সন্ধার কিছু আগে আগে আমাদের নৌকা গুদিঘাটা নামক স্থানে ভিড়লো। মামা লাফিয়ে নামলো নৌকা থেকে। কাছাকাছি লেহাজ শরীফ নামক মামাদের এক পারিবারিক ওঝার কাছ থেকে পানি পড়া, শরিষা তেল পড়া ইত্যাদি নিয়ে এলেন আল্লাহর রহমত হিসেবে যা মামার ভালো ফলাফলে সহায়তা করবে। শুনলাম সে নাকি একটা কলম (ফাউন্টেন পেন) আর এক দোয়াত কালিও ফুঁ দিয়ে এনেছে। মা আবার সেই কালি সাবধানে রাখতে বললেন। নিয়ম হলো এখন থেকেই এসব ব্যবহার করতে হবে আর যখন ফুঁ দেয়া আইটেম ফুরিয়ে আসবে তখন তাতে আবার নতুন করে মিশালে পুরোটা পড়া পানি হয়ে যাবে। যাই হোক মামা আমার জন্য দুটি পাকা সফেদা নিয়ে এসেছিলো। আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। হঠাৎ আব্বুর চাপা রাগান্বিত কন্ঠে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। বুঝলাম আব্বু রাগের বিষয় মামার মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দেয়া সংক্রান্ত। আমি বিষয়টি বোঝার জন্য ঘুমের ভান করে ঘাপটি মেরে পরে রইলাম। শুনলাম আব্বু মামাকে বলছে
– এই সার্টিফিকেট দিয়ে কি হবে? কি শিখবি তুই? ভবিষ্যতে কি করে খাবি?
মামা কোন কথা বলছে না। মাথা নিচু করে বসে আছে। আব্বু আবার বলছে
– তুই লেখাপড়া বাদ দে। সবার লেখাপড়া করতে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্য কাজ কর।
আমি বিষয়টি ধরতেই পারছি না। তবে আব্বুর শিক্ষক সুলভ আচরণ বলে দিচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল আছে। আমার শিক্ষক বাবা সবাইকেই ছাত্রজ্ঞান করে কথা বলেন। যাই হোক অনেক সময় ঘাপটি মেরে থেকে যা বুঝলাম তার সার মর্ম হলো যহেতু মামার কোন সম্ভাবনাই নেই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার তাই মামা মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে অন্তত একটা হলেও শিক্ষা সনদ পেতে চায়। আর মাদ্রাসা থেকে মামার এই কারনে পাশ সম্ভাবনা রয়েছে কারণ মাদ্রাসায় রহমত বরকত রয়েছে। তবে সেই রহমত বরকত আল্লাহর না, মাদ্রাসার শিক্ষকদের বর্ষন করা রহমত। মানে হলো নকল!!! মাদ্রাসার শিক্ষকেরা বই খুলে লিখতে দিবে মামাকে। এই হলো আসল রহমত আসল বরকত। তবে “ঐ” নির্দিষ্ট মাদ্রাসার অতিরিক্ত সুবিধা হলো আগে আগে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করে করে ছাত্রদের প্রাকটিসের সুযোগ দেয়া হয়। মানে পাশ না কবে যাবে কই? আলেম বানিয়েই ছাড়বে। কিন্তু এর জন্য মামাকে একটু বেশী টাকা গুনতে হবে। সেটা বিষয় না। মামার বাপের টাকার শেষ নেই। মাদ্রাসার বড় বড় শিক্ষকদের সাথে মামার নাকি এব্যপারে বেশ চমৎকার ডিল হয়েছে। আর এমন তো শুধু মামা একা নয় অনেকেই আছে। এসব কাজে ঐ মাদ্রাসার সুনাম নাকি কিংবদন্তি লেভেলের। মামা এবার পাশ করেই ছাড়বে। আমি আরো গভির ঘুমের অভিনয় করে পরে রইলাম।
মামা সেবার দাখিল পাশ করেছিলো। আমাদের বাড়ী গিয়েছিলো মাটির হাঁড়িতে করে এক হাঁড়ি রসগোল্লা নিয়ে। আব্বু স্কুল থেকে ফিরে পুরো হাঁড়ি ধরে ফেলে দিয়েছিলেন। তাতে মায়ের কি অভিমান! আব্বু বিকেলে আমাকে নিয়ে বাজারে গিয়ে মিষ্টি কিনে খাওয়ালেন, বাড়ীর জন্য মিষ্টি নিলেন। দোকানে এক কোনায় বসে বাপ পুত বসে বসে রসগোল্লা খেতে খেতে আব্বু বললেন
– সারা জীবন টেক্সট বই পড়বি, কোন দিন গাইড বই নোট বই পড়লে সর্দ কইরা ফালামু। (মানে খুন করে ফেলব)
সর্দ হওয়ার ভয়ে আমরা তিন ভাই কোন দিন আর নোট বই গাইড বই পড়িনি এমন কি আমি চোখেও দেখিনি।
তবে মামার আর্থিক অবস্থা আমার চেয়ে আব্বুর চেয়ে ঢের বেশী ভালো।
বোধ করি মামার উপরে আল্লাহ তাহার রহমতের ভান্ডার উপুর করিয়া ধরিয়াছে।

© কস্মিন কালের কথা , লেখক : মিডিয়া কর্মী

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...