ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - ঐতিহ্যের ঢেকি বিলুপ্ত ..!

ঐতিহ্যের ঢেকি বিলুপ্ত ..!

দেবদাস মজুমদার >

ও ধান বানরে ঢেকিতে পাড় দিয়া,
পিংকী নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া ।
ও ধান বানরে……
ধান বেচিয়া কিনমু শাড়ী পিন্দিয়া যাইমু বাপর বাড়ী,
স্বামী যাইয়া লইয়া আইব গারুর গাড়ী দিয়া ।
ও ধান বানরে……………… ’’।

চিরায়ত বাংলার এই গান বাঙালীর ঢেকির আবহ জানান দেয়। নতুন ধান বানা,সেই ঢেকিতে ছাটা নতুন চালে পিঠার গুড়ি । আবার ঢেকিতে চিড়া কোটা আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের অংশ জুড়েই আছে ।
প্রবচনেও একদা শোনা যেত –

‘‘চিরা কুটি, বারা বানি,
হতিনে করইন কানাকানি ।
জামাই আইলে ধরইন বেশ,
হড়ির জ্বালায় পরান শেষ’’।

ঢেকি আমাদের শাশ্বত কৃষি নির্ভর গ্রামীণ জনপদে দরকারী ছিল একদা। তবে এখন যান্ত্রিক যুগের আধুনিকতায় মানুষ স্বল্প সময়ে ও শ্রমে দ্রুত আধুনিক ও নতুন নতুন প্রযুক্তি অতীতের ঐতিহ্যবাহী অনেক অনেক জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে আমাদের অতীত জীবনাচারের অনেক জিনিস পরিত্যাগ করছে। ফলে আমাদের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্য সমাজ সংস্কৃতির অংশ ঢেকির ব্যবহার হারিয়ে গেছে।
আগেকার যুগে গ্রামের প্রত্যেক গৃহস্থ বাড়িতে ধান বানা ও চালের গুড়া কিংবা চিড়া কোটার জন্য ঢেকির ব্যবহার হত। ঢেকিছাটা চাউলের কদর ছিল খুব। এ চাউলের ভাতের মজাই আলাদা। ঢেকিছাটা চাউলে প্রচুর পরিমান ভিটামিন বিদ্যমান তাই ঢেকিছাটা চালের চাহিদা আজও কমেনি।
ধান ভাঙা ঢেকি আমাদের গ্রাম বাংলার প্রাচীন গ্রামীন ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপুর্ণ জিনিস। গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশেও এর একটা বিশেষ গুরুত্ব ছিল। একসময় গ্রাম গঞ্জসহ সর্বত্র ধান ভাঙ্গা, চাউল তৈরি, গুড়ি কোটা, চিড়া তৈরি, মশলাপাতি ভাঙ্গানো সহ বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী ঢেকি। তখন এটা গ্রামীণ জীবন ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। কুটির শিল্প তথা পেশা হিসেবেও ঢেকিতে ধান বানা হত। গ্রামের সাধারণ গৃহবধূরাই ঢেকি সাধারনত চালনা করে।

জনশ্রুতি আছে, সত্তরের দশকে সর্বপ্রথম দেশে রাইসমিল বা মেশিন দিয়ে ধান থেকে চাল বের করার প্রচলন শুরু হয়। তখন থেকেই ঢেকির প্রয়োজনীয়তা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। একসময় সারাদেশে বছরজুড়ে তের পার্বণ পালিত হত। গ্রাম গঞ্জে একটার পর একটা উৎসবের আমেজে ভরপুর থাকত। বাংলায় হেমন্ত উৎসব, পৌষ পার্বণ, বসস্ত উৎসব, বর্ষবরণ,বিয়ে উৎসব,পিঠা তৈরির উৎসব, হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা পূজা, গায়ের মেলাসহ নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন হত। এখনও এসব উৎসব হয় তবে ঠিক আগের মত সেই প্রাণ নেই।
গ্রামীণ নারীরা চালের গুড়ি দিয়ে নানা রকম পিঠা যেমন চিতল পিঠা, রুটি পিঠা, ঝুরি পিঠা, চুঙ্গা পিঠা, তালের পিঠা,পাটি সাপটা পিঠা, নুনগরা, নুনরডোবা, পব, সমুছা সহ তৈরী করতেন হরেক রকমের পিঠাপুলি। এসব তৈরী হত ঢেকি ছাটা চালের গুড়ি দিয়ে।
কালের বিবর্তনে এসব পিঠা তৈরীতে ঢেকি ছাটা চালে গুড়া তেমন আর ব্যবহার হয়না। ঢেকি হারিয়ে গিয়ে এর ব্যবহারও বিলুপ্ত । ্একদা গ্রামের বড় গৃহস্থ বাড়িতে ঢেকি থাকা ছিল অনেকটাই বনেদী সমৃদ্ধ গৃহস্থ পরিবারের পরিচয় বহন করত। এখন কালের পরিক্রমায় আমাদের ঐতিহ্যের ঢেকি বিলুপ্ত। তাই গ্রাম বাংলার গৃহস্থ বাড়িতে এখন আর শোনা যায়না ঢেকির ছন্দময় শব্দ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...