ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনে’ মানসিক ভারসাম্যহীন রুবি তিনমাস শিকলে বাঁধা !

শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনে’ মানসিক ভারসাম্যহীন রুবি তিনমাস শিকলে বাঁধা !

খালিদ আবু, পিরোজপুর >
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের মেয়ে রুবি বেগম। । ২০০৬ সালে পার্শ্ববর্তী বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চর হোগলা বুনিয়া গ্রামের হোসেন আলীর পুত্র জয়নাল উদ্দিনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয় রুবির। তাদের সাত বছরের এক ছেলে ও তিন বছরের এক মেয়ে রয়েছে। যৌতুকের দাবী মেটাতে না পারায় শ্বশুর বাড়ির অত্যাচারে মানসিক ভারসাম্য হারানো রুবিকে প্রায় তিন মাস যাবত হাতে শেকল বাধা অবস্থায় বাবার বাড়িতে দিন কাটাতে হচ্ছে।
রুবির ভাই রুবেল হাছান জানান, রুবিকে বিয়ে করার আগে জয়নালের আর এক জন স্ত্রী ও মেয়ে ছিল। সে কথা গোপন করেই রুবিকে বিয়ে করে জয়নাল। হাছান বলেন, বিয়ের দু’তিন বছর যেতে না যেতেই নানা অজুহাতে রুবির ওপর অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে স্বামী, শ্বাশুড়ী, ননদ ও জয়নালের প্রথম স্ত্রী। শ্বশুর বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময় টাকা পয়সা এনে দেয়ার জন্য জয়নাল চাপ দেয় রুবির উপর। নিরুপায় হয়ে রুবি আমাদের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পয়সা এনে দিলেও তাতে মন ভরেনি জয়নালের। এভাবে কেটে যায় ১০ টি বছর। দিন দিন অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় সাত মাস আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রুবি। এরইমধ্যে আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে পাগল বলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। জয়নাল ও তার মা লোভী প্রকৃতির। আর এ জন্যই এখন আমার বোনের এ অবস্থা।
রুবি বর্তমানে তার মায়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। তবে রুবির গর্ভের সন্তান দুমাস আগে নস্ট হয়ে গেছে। তার বৃদ্ধ মা হালিমা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন এ মেয়েকে নিয়ে পড়েছেন চরম অসুবিধার মধ্যে। রুবিকে সারাক্ষন শিকলে বেধে রাখতে হচ্ছে। প্রায় ৩ মাস যাবত হাতে শেকল বাধা অবস্থায় দিন কাটছে তার। রুবির উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মায়ের আর্থিক সংগতি না থাকায় দিনদিন তার অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
রুবির মা হালিমা খাতুন বলেন, আমার মেয়েটাকে ওরা বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার করে পাগল বানিয়ে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুইটা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েও ওদের কোন মায়া হয়না। মেয়েটিকে নিয়ে এখন আমি কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।রুবির প্রথম সন্তানের বয়স এখন ৭ বছর এবং দ্বিতীয় সন্তানের বয়স ৩ বছর। বড় সন্তান বর্তমানে তার পিতার কাছে রয়েছে। সন্তানরা মায়ের কাছে গেলে হাতে শেকল পড়া অবস্থায় তাদের দিকে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকে রুবি।
এ অবস্থায় মা হালিমা খাতুন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ দিলে পাগল রুবিকে নিয়ে সংসার করবেনা বলে জানায় জয়নাল। এজন্য জয়নাল স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ হাজার টাকা দেয় রুবিকে তালাকের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করানোর জন্য। এতে রাজি হননি রুবির মা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় ভাবে শালিশ বৈঠক বসলেও তাতে কোন কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে রুবির স্বামী জয়নালের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে তিন নম্বর বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, উভয়পক্ষই আমার কাছে এসেছিল। আমি বিষয়টির মীমাংসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে খোজ নিয়েছি। রুবি বর্তমানে মানষিক ভারসম্যহীন। যখন তখন পুকুরে যায়, এদিক ওদিক হেটে যায় তাই পরিবারের লোকজন তাকে বেধে রেখেছে। তিনি বলেন, পরিবার থেকে লিখিত কোন অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...