ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

নূর হোসাইন মোল্লা >

সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ একটি প্রধান সামাজিক, জাতীয়, রাষ্ট্রীয় এবং অন্তর্জাতিক সমস্যা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ যেভাবে বিস্তার লাভ করছে তাতে সমাজ এবং রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্বের কোন দেশের মানুষই নিজেকে নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সন্ত্রাসী বা জঙ্গীদের কর্মকান্ড শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠি কেন্দ্রিক নয়, রাষ্ট্রিয় অবকাঠামোও সব সময় আতংকগ্রস্ত করে রাখে। বেতার, টেলিভিশনের সংবাদ এবং পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় যে, দেশে ও বিদেশে কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে এবং এতে নিরাপরাধ মানুষ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। অনেক সময় সন্ত্রাসীরা আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।

সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ কি?
ত্রাস শব্দ থেকে সন্ত্রাস শব্দটির উৎপত্তি। ত্রাস হচ্ছে ভয়-ভীতি, আতংক ও ভীতিকর অবস্থা। যারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হয়। সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কেউ বা একটি গোষ্ঠি আধিপত্য বিস্তার করে থাকে। সন্ত্রাসের মাধ্যমে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, যাতে সকলের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়। সন্ত্রাস কখন একক প্রক্রিয়ায় বা সংগঠিত গোষ্ঠির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। নীতি বহির্ভুত কর্মকান্ডের মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ক্ষতি সাধন, হুমকি প্রদর্শন, নিরাপত্তা হরণ, পরিবেশ বিপর্যয়করণ, ব্যক্তিগত ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস ইত্যাদি সন্ত্রাসের অন্তর্ভূক্ত। সঙ্গবদ্ধভাবে ভয় দেখিয়ে মানুষকে বশীভুত করার নীতি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ। সন্ত্রসবাদকে ইংরেজী ভাষায় বলাহয় ঞবৎৎড়ৎরংস. ঈড়হঃবসঢ়ড়ৎধৎু ঊহমষরংয উরপঃরড়হধৎু -তে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছেঃ “ঞযব ঁংব ড়ভ ারড়ষবহপব ংঁপয ধং নড়সনরহম, ংযড়ড়ঃরহম ড়ৎ শরফহধঢ়ঢ়রহম ঃড় ড়নঃধরহ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ফবসধহফং ংঁপয ধং সধশরহম মড়াবৎহসবহঃ ফড় ংড়সবঃযরহম রং পধষষবফ ঃবৎৎড়ৎরংস.” যারা সশস্ত্র হয়ে পথে-ঘাটে, ঘর-বাড়ীতে, বাস-রেলগাড়ীতে, লঞ্চ-ষ্টীমারে এবং বিমানে নিরস্ত্র মানুষের ওপর আক্রমন চালিয়ে জান-মাল হরণ করে তারাও সন্ত্রাসী।

সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কারণঃ
সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ ১) ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব, ২) সুশিক্ষার অভাব, ৩) মাদকাশক্তি, ৪) নের্তৃত্ব ও ক্ষমতার লোভ, ৫) অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, ৬) বেকারত্ব ইত্যাদি।

সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের একমাএ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল, আতংকগ্রস্ত করে ধন-সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা দখল এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। টেলিভিশন এবং পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় যে, যারা সরাসরি সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কর্মকান্ডের সাথে জড়িত, খুন-খারাবি, বোমা হামলা এবং অপহরণ করে থাকে তারা নিজেরাও জানে না কি উদ্দেশ্যে তারা এ জঘন্য কাজটি করছে। সন্ত্রাসীরা মানব নয়, তারা দানব।

ধর্মের নামে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কর্মকান্ডঃ
বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ধর্মের নামে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। সন্ত্রাসী বা জঙ্গিরা তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে ইসলাম তথা ধর্মের নাম ব্যবহার করছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জেহাদ, জে.এম.বি., হিজবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ্ বাংলা টিম এ সংগঠনগুলো নাশকতামূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর মদদে হিযবুল্লাহ্ ইসলামী সমাজ, হরকাত উল মুজাহিদীন, হরকাতে ইসলাম আল জিহাদ, জাইশা-ই মোহাম্মদ, ইসলামী দওয়াত কাফেলা ইত্যাদি কয়েকটি সংগঠন তৎপর রয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন পুস্তক-পুস্তিকা সরল মনা যুবক-যুবতী এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করে তাদেরকে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করছে। অথচ ইসলাম ধর্মের সাথে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কোন দূরতম সম্পর্ক নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্যায়, অবিচার ও সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও জন নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্যে তিনি এবং তাঁর সমবয়সী কতিপয় উৎসাহী যুবককে নিয়ে গড়ে তোলেন “ হিলফুল ফুজুল” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। ইসলাম প্রচারিত হয়েছে উদারতায়, তলোয়ারের মাধ্যমে নয়। বল প্রয়োগ করে ইসলাম প্রচার করা যাবেনা। ইসলাম ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড পরিচালনা করে তারা ইসলাম ধর্ম তথা মানবতার প্রধান শত্রু। গত কয়েক বছর যাবৎ উগ্রপন্থি নিষিদ্ধ ইসলামী সংগঠন যথাঃ হিজবুত তাহরীর, হরকাতুল জেহাদ, জে.এম.বি., আনসার উল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি জঙ্গি কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। তাদের কর্মকান্ডে শিকার হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, হিন্দু, খৃষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের পুরোহিত ও বিদেশী নাগরিকগণ। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যথেষ্ট তৎপর বিধায় জঙ্গিরা তেমন সুবিধা করতে পারছে না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে তারা শুধু স্থান পরিবর্তন করছে। তারা যেখানেই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানেই হাজির হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেষ্ট তৎপর থাকা সত্বেও গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের হাতে ২৪ জন দেশী-বিদেশী নিরাপরাধ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জনগণ ও মিডিয়াকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। জনগণ ও মিডিয়ার সহযোগিতা ছাড়া জঙ্গিদেরকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। আসুন, আমরা সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সুদৃঢ় প্রতিরোধ গড়েতুলে এদেরকে নির্মূল করি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

লেখকঃ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...