বামনা প্রতিনিধি▶️
বরগুনার বামনায় যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূর শরীরে দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপের করে পাশবিক নির্যাতন ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ অক্টোবর এ নির্যাতনের ঘটনার পর গতকাল মঙ্গললবার দিবাগত রাতে সংকটজনক অবস্থায় বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নির্যাতিতা ওই গৃহবধূর বড় ভাই উত্তর ডৌয়াতলা গ্রামের নূরুল হক হাওলাদার বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে বামনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করে। নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামের আলতাফ তালুকদারের ছেলে মালায়শিয়া প্রবাসী মো. আল-আমীন তালুকদার(২৮) এর স্ত্রী। মামলার আসামীরা হলো মো. আল-আমীন(২৮), মো. আলতাফ হাওলাদার(৫৮), মোসা. রাশেদা(৪৭) ও মো. মহারাজ(৩০)। গত মঙ্গলবার রাতে ওই গৃহবধূর শ্বশুর ও শ্বাশুরীকে গ্রেফতার করেছে বামনা থানা পুলিশ।
মামলা ও থানা সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামের মালায়েশিয়া প্রবাসী মো. আল-আমীনের সাথে ২ বছর আগে প্রবাসে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন মোহরে তার(নির্যাতিতা গৃহবধূ) বিয়ে হয়। পরে ওই প্রবাসী স্বামী দেশে চলে আসে। তিনি তার স্ত্রীর কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। এই টাকা ওই গৃহবধূর পরিবার দিতে না পারায় বিভিন্ন সময়ে তার উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। স্বামী আল আমীন তার স্ত্রীকে রেখে পুনরায় মালয়েশিয়া চলে গেলে তার নির্দেশে শ্বশুর ও শ্বাশুরী সহ অন্যান্যরা মিলে তাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ৩ লাখ টাকা না নিয়ে আসলে স্বামীর ঘরে ঢুকতে দেওয়া হবেনা বলে স্বামী আলআমীনের পরিবার তাকে জানায়। পরে আলআমীন একতরফা ভাবে আলআমীন তার স্ত্রীকে বিদেশ থেকে ডাকযোগে তালাক প্রদান করে। ওই গৃহবধুর পরিবার তালাক গ্রহণ না করলে আলআমীন বাড়িতে চলে আসে। ওই গৃহবধুর পরিবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দায়ের করলে চেয়ারম্যান তার স্বামীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খোরপোশ ধার্য্য করে। স্বামীর পরিবার ওই টাকা দিতে না পারায় পুনরায় ওই গৃহবধূকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। এর পরে ওই ৩ লাখ টাকার জন্য চলে তার উপর অমানুষিক শাররীক নির্যাতন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে টাকা নাপেয়ে পাষন্ড স্বামী আল-আমীন ও তার পরিবারের স্বজনরা ওই গৃহবধুর শরীরে দাহ্য পদার্থ জাতীয় দ্রব্য নিক্ষেপ করে। এতে ওই গৃহবধু গুরুতর জখম হয়। এঘটনা গৃহবধূর বড় ভাই জনতে পেরে তাকে ৫ সেপ্টেম্বর মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। রোগীর অবস্থা গুরুতর দেখে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেরই বাংলা মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠায়। ওই গৃহবধূ বর্তমানে সেখানে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে।
এব্যাপারে নির্যাতনের শিকার ওই গ্রহবধূর ভাই মো. নূরুল হক জানায়, তার বোনকে বিয়ের পর থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো তার পাষন্ড স্বামী।
এব্যপারে বামনা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. শাহাবুদ্দিন জানায়, মামলা দায়ের পরে ওই নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার শ্বশুর ও শ্বাশুরীকে গ্রেফতার করে আজ বুধবার সকালে বরগুনা কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।