ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - পিরোজপুরের এক মুক্তিযোদ্ধার দুটি ব্যাংক হিসাবে ভাতা গ্রহণ !

পিরোজপুরের এক মুক্তিযোদ্ধার দুটি ব্যাংক হিসাবে ভাতা গ্রহণ !

 

খালিদ আবু, পিরোজপুর >>
১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ ৯মাস জীবন বাজি রেখে যারা দেশকে শত্রুমুক্ত করেছিল তারাই পেয়েছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। সেই প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের ত্যাগের সম্মানস্বরূপ সরকার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। সেই সম্মান আজ বিভিন্ন ভাবে কলুষিত করে ফেলেছে গুটি কয়েক নামধারী মুক্তিযোদ্ধা, জন্ম দিয়েছেন বিতর্কের। অর্থের লোভে হারিয়ে ফেলেছে নৈতিকতা আর আদর্শ। তেমনি একজন মুক্তিযোদ্ধা কেএম আলম। যিনি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলা ও খুলনার খালিশপুরের সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে নিচ্ছেন বছরের পর বছর। কে এম আলম পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার জয়কুল গ্রামের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে স্থায়ী ভাবে খুলনার খালিশপুরে বসবাস করছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে, মুক্তিযোদ্ধা কে এম আলম পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার জয়কুল গ্রামের মো. মোকলেছুর রহমানের ছেলে । তার লাল মুক্তি বার্তা নং-০৬০৫০৪০২২৫, গেজেট নং-৬২১, তারিখ-১৪-০৫-২০০৫, জন্ম তারিখ- ১৭-০৩-১৯৫৪ হিসেবে সোনালী ব্যাংক, কাউখালী শাখা থেকে সম্মানী ভাতা উত্তোলন করেন। সোনালী ব্যাংক, কাউখালী শাখা হিসাব নং- ১০০০০৯২৫২।
কে এম আলম কাউখালীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত ও সম্মানী ভাতা গ্রহনের তথ্য গোপন করে ২০০৬ সাল থেকে তার বসবাসকৃত খুলনার খালিশপুর উপজেলার ১০নং ওয়ার্ডের বাড়ী নং- ডি/১৫ ঠিকানা ব্যবহারকরে কে এম আলম পিতাঃ হাজী মোকলেছুর রহমান নামে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে তার মুক্তিবার্তা নং- ০৪০১০৩০০৫৫, জন্ম তারিখ ১৭-০৩-১৯৫৪ সেখানেও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করছেন। খুলনার সোনালী ব্যাংক (খালিশপুর শাখা) শাখা ব্যবস্থাপক মো. মফিজুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, হিসাব নং ০০২৬০০০১৫৩. থেকে কে এম আলম মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা গ্রহন করে আসছেন । একই শাখার অফিসার (ক্যাশ) মাসুদ হোসেন জানান, ডিসি অফিস থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের যে তালিকা আমাদের কাছে পাঠায় আমরা সেই অনুযায়ী তাদের একাউন্টে টাকা দেই, তারা তাদের চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেণ।
এ বিষয়ে কাউখালী সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল মান্নান জানান, আমাদের কোর্ট ও দুদক ছাড়া কোন এ্যাকাউন্টের তথ্য দেয়ার নিয়ম নেই, তবে এ নামে ( কেএম আলম) একজন ভাতাভোগী এখান থেকে তার নিজস্ব এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভাতা গ্রহন করেন।
একজন মুক্তিযোদ্ধা দেশের নির্দিষ্ট একটি স্থানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত হওয়া ও একটি ঠিকানা ব্যবহার করে ভাতা গ্রহনের নিয়ম থাকলেও কে.এম আলম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে দুই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন বছরের পর বছর।
কাউখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমা-ার মো. হারুন-অর-রশিদ সাঈদ কেএম আলমের বিষয়ে বলেন, তিনি একজন সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন। এ বিষয়ে আমি শুনেছি। পরে আলমের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে এ বলেন, তার বন্ধুরা খালিশপুরে তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকা অর্ন্তভূক্ত করেছে।
কাউখালী থানা ডেপুটি কমান্ডার মো. আলী হোসেন তালুকদার জানান, এ বিষয়টি গত রোববার শুনেছেন। পরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি তার একাউন্ট নম্বরটি জানার জন্য। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় ব্যস্ত থাকায় তা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ডেপুটি কমান্ডার বলেন, কেএম আলম এ উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেয় তবে খুলনা থেকে ভাতা তুলেন কি-না আমার জানা নেই।
অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা কে.এম আলম দুই উপজেলায় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও ভাতা গ্রহন বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি স্থায়ীভাবে খুলনার খালিশপুরে বসবাস করি। এজন্য আমি জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল) ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি কাউখালী উপজেলার নামটি বাতিল করার জন্য।
এতো বছর ভাতা গ্রহনের পর এখন একটি উপজেলার নাম কর্তন বিষয়ে আবেদন, এমন প্রশ্নে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনুশোচনার সুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, ভুল তো ভুলই। দুই স্থানে (খুলনার খালিশপুর ও কাউখালী) মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হওয়া ভুল হয়েছে। আমি গত ৬মাস পূর্বে এ আবেদন করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি হিসেব করে দেখেছি, মোট ২লাখ ৬০ হাজার টাকার মতো উত্তোলন করেছি, সেই টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেব। তিনি এবছর হজ্বে যাচ্ছেন বলেও জানান।
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা সোমবার বিকেলে বলেছেন, এ বিষয়ে শুনেছি তবে, নির্দিষ্টভাবে কেউ আমার কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...