ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - ভান্ডারিয়ার পশারীবুনীয়া গণহত্যা মামলা দ্বিতীয়দফা তদন্তে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল

ভান্ডারিয়ার পশারীবুনীয়া গণহত্যা মামলা দ্বিতীয়দফা তদন্তে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল

দেবদাস মজুমদার >

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে উপজেলার পশারীবুনীয়া গ্রামে গণহত্যায় আট শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হত্যাসহ গণহত্যার বিচার দাবিতে দায়েরকৃত মামলার দ্বিতীয়দফা তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল উপজেলার পশারীবুনীয়া গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আবদুল হান্নান খানের (পিপিএম) এর নেতৃত্বে অপর দুই কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. বদরুল আলম পশারীবুনীয়া গ্রামের গণহত্যার স্থান পরিদর্শন করে গ্রামবাসির সাথে কথা বলে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে স্থানীয় পশারীবুনীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে মামলার বাদী,সাক্ষি,মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জন মানুষের ভাষ্য গ্রহণ করেন।

জানাগেছে, ১৯৭১ সালের ৯কার্তিক মাসে ভান্ডারিয়ার হেতালিয়া গ্রামের রাজাকার আমীর হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে একদল রাজাকার বাহিনী পশারীবুনীয়া গ্রামের হিন্দু অধ্যূষিত গ্রামে লুটপাট চালায়। এসময় রাজাকাররা আটজন হিন্দু বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে। পরে আট মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে স্থানীয় সংঘঠিত রাজাকার বাহিনী বনমালি গাছারু বাড়ী নাম স্থানে নির্বিচারে গুলি করে । এসময় ভাগ্যক্রমে পশারী বুনীয়া গ্রামের নিরোদ চন্দ্র বালার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কৃষক বিজয় কৃষ্ণ বালা গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যান। ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে সাত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরা হলেন বাদীর পিতা নিরোদ চন্দ্র বালা, ভাই রনজিৎ কুমার, ভগ্নিপতি সুখময়, কাকা গঙ্গা চরণ মিস্ত্রী, কাকাত ভাই অমূল্য মিস্ত্রী, সমুল্য মিন্ত্রী।
২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কৃষক বিজয় কৃষ্ণ বালা বাদি হয়ে অভিযুক্ত চার জন রাজাকারের নামে পিরোজপুর জেলা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ২৫ জন চিহ্নিত সাক্ষির নাম উল্লেখ করা হয়।
পরে আদালত মামলাটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে। মামলায় ভান্ডারিয়া উপজেলার হেতালিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন হাওলাদারের ছেলের রাজাকার আমীর হোসেন হাওলাদার (৭০), তার ভাই ফজলুল হক হাওলাদার (৬০), একই গ্রামের মো. শামসুল হক হাওলাদারের ছেলে মো. নূর আমীন হাওলাদার (৫৮) ও আবুল হাসেম হাওলাদারের ছেলে মো. আবদুল মান্নান হাওলাদার (৭০)কে আসামী করা হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি আমলে নিয়ে ২০১৬ সালে প্রথম দফা তদন্ত সম্পন্ন করে। আজ মঙ্গলবার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনারেল তিন সদস্যের তদন্তদল দ্বিতীয় দফায় তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে।
বাদীর দাযেরকৃত এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সময় অভিযুক্ত আসামীরা পাক বাহিনীর দোসর হয়ে বাদীর বাবা নিরোধ চন্দ্র বালা, ভাই রনজিৎ বালা, চাচা সুকুমার মিস্ত্রী, ভগ্নিবতিসহ ৬জনকে ধরে নিয়ে পূর্ব পশারবিুনিয়া গ্রামে বনমালী গাছারু বাড়ির পুকুরের দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ে এক লাইন দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া আরও ২০জনসহ মোট ২৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে এ রাজারকরা। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী ঘর লুট পাট, মেয়ে ও বউদের ধর্ষণ করে বসত ঘরে অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। এসময় ভাগ্যক্রমে বাদী বিজয় কৃষ্ণ বালা গুলিবিদ্ধ আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকেন । আসামীরা তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। এদিকে এলকাবাসী সূত্রে জানা যায় ৪দলীয় জোট সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজাকার আমীর হোসেন ও তার অপর সহযোগিরা পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আবদুল হান্নান খান (পিপিএম) বলেন, পশারীবুনীয়ার সাত মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলাটি দ্বিতীয় দফায় তদন্ত করতে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। মামলার সার্থে তদন্তের বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...