ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - স্বরূপকাঠিতে স্কুল শিক্ষককে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় নির্যাতন : থানায় মামলা, গ্রেফতার-২

স্বরূপকাঠিতে স্কুল শিক্ষককে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় নির্যাতন : থানায় মামলা, গ্রেফতার-২

মো. খালিদ আবু, পিরোজপুর >
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সমুদয়কাঠী ইউনিয়নের মৈশানী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিধান চন্দ্র সরকারকে একটি ঘরে আটকে রেখে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদা চেয়ে না পেয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী নয়ন গাজী ও তার সহযোগীরা শিক্ষক বিধান চন্দ্র সরকারকে বিবস্ত্র করে প্রায় ২২ ঘন্টা নির্যাতন করার পরে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। নয়ন বাহিনি এ শিক্ষককের পুরুষাঙ্গসহ শরীরে স্পর্শকাতর স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করায় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঘটনার চার দিন পর বুধবার সকালে নেছারাবাদ থানার উপপরিদর্শক বাদল কৃষ্ণ বাদী হয়ে মৈশানী গ্রামের নয়ন গাজীকে প্রধান আসামি করে আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর সকালে দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হল উপজেলার সাগরকান্দা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মাইনুল ইসলাম (১৮) ও একই গ্রামের মাহাবুব তালুকদারের ছেলে সিতুল তালুকদার (২০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মৈশানী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধান চন্দ্রকে এক ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় নয়ন গাজীর নেতৃত্বে আট থেকে ১০ জন শুক্রবার বিকাল তিনটা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মারপিট করে। এরপর তাকে গ্রামের একটি মন্দিরে নিয়ে আটকে রাখেন তারা। পর দিন শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক বিধানকে উদ্ধার করে আরেক সহকারী শিক্ষিকা পর্শিয়া হালদারের সহায়তায় পালিয়ে গিয়ে বর্তমানে বরিশালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে মুঠোফোনে তিনি জানিয়েছেন। বিধান চন্দ্র সরকার আরো বলেন, নির্যাতনের ঘটনা কাউকে জানালে আমাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে, তাই প্রাণভয়ে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি।’ তিনি বলেন, নয়ন ও তার দলবল তার পুরুষাঙ্গসহ শরীরে স্পর্শকাতর স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করায় তিনি মারাত্মকভাবে অসুস্থ। নির্যাতিত শিক্ষক বিধান চন্দ্র সরকারের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। সন্ত্রাসী নয়ন গাজী ও তার সহযোগীদের ভয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশাসনকেও বিষয়টি অবহিত করতে পারেনি। এমনকি সন্ত্রাসীদের ভয়ে ওই এলাকার কেউ এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়টি নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার ৪ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- নয়ন, মাইনুল, সিদুল ও নাছির। এদের মধ্যে মাঈনুল ও সিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটানায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা দেয়নি, তাই পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং নয়ন ও নাছিরকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্বরূপকাঠী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘নয়ন গাজীর নামে অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ৭/৮টি মামলা রয়েছে। মাস খানেক আগে তাকে গ্রেফতার করতে গিয়ে আমি নিজেও একবার আহত হয়েছিলাম।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি স্বপন কুমার জানান, নন-গভর্নমেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেশন অথরিটি (এনটিআরসিএ) এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পর বিধান সরকার গত ২৪ নভেম্বর মৈশানী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিপিএড শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি পাশের একটি ঘরে একা বসবাস করে আসছেন। ঘটনার দিন শুক্রবার এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের মিথ্যা অভিযোগ এনে সন্ত্রাসী নয়ন গাজী ও তার সহযোগীরা শিক্ষক বিধান চন্দ্রকে বিদ্যালয়ের পাশের একটি দোকানের সামনে মারধর শেষে বিবস্ত্র করে ফেলে রাখে। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ওই শিক্ষককে পাশের হরি মন্দিরে নিয়ে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন চালায়। পরদিন শনিবার দুপুরে নয়ন গাজীর লেখা একটি মুচলেকায় শিক্ষক বিধান চন্দ্র সরকারের স্বাক্ষর রেখে ওই বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে ছেড়ে দেয়। এরপর বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষিকা পর্শিয়া হালদারের সহায়তায় তিনি পালিয়ে বরিশাল গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...